বার্ষিক দুই থেকে আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, ১০-৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ঢালু জমি ও বেলে-দোঁয়াশ মাটি—সব দিক দিয়ে বিচার করলে উত্তরবঙ্গের মাটি ও জলবায়ু গোলমরিচ চাষে উপযুক্ত।
অনেকগুলো জাত থাকলেও উত্তরবঙ্গের জন্য পানিয়ূর-১, কারিমুণ্ডা জাতগুলি বেশি প্রচলিত। ইরিথ্রিনা, সিলভার ওক, সুপারি, নারকেল ইত্যাদি অবলম্বণকারী গাছের সঙ্গে লতিয়ে বাড়ে গোলমরিচ। অবলম্বণকারী গাছের বয়স চার-পাঁচ হলে গোলমরিচ চাষ শুরু করতে হয়।
বর্ষার শুরুতে দুই বা তিনটি পর্ব যুক্ত গোলমরিচের কলম প্রতিটি অবলম্বনকারী গাছের উত্তর-পূর্ব কোণে ৩০ সেমি জায়গা ছেড়ে লাগাতে হবে। অন্তত এক ফুট লম্বা, এক ফুট চওড়া এবং এক ফুট গভীর গর্ত করে তাতে ৮-১০ কিলোগ্রাম কম্পোস্ট সার মিলিয়ে গর্ত ভর্তি করে কলম চারা লাগাতে হবে। পরে যখন গোলমরিচের লতা বাড়বে তা অবলম্বনকারী গাছের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। আস্তে-আস্তে পর্ব থেকে শিকড় বার হয়ে অবলম্বনকারী গাছকে আঁকড়ে ধরে ফেলবে।
গোলমরিচ চাষের অন্তরায় কিছু ছত্রাক জাতীয় রোগ। এদের মধ্যে কুইক উইল্ট, অ্যানথ্রাকনোজ উল্লেখযোগ্য। এই সমস্ত রোগের হাত থেকে দূরে রাখতে হলে দেখতে হবে যাতে জমিতে জল না দাঁড়ায়, গাছের মূল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ছত্রাক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতাগুলি ধীরে ধীরে কালো রং ধারণ করে। মাটির উপরে থাকা কাণ্ড পচতে শুরু করবে এবং গাছটি খুব দ্রুত শুকিয়ে যাবে। এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে কপার অক্সিক্লোরাইড (০.২ শতাংশ) ৫-১০ লিটার প্রতি গাছের গোড়ায় দিতে হবে। এবং বোর্দো মিশ্রণ এক শতাংশ স্প্রে করতে হবে ১২-১৫ দিন অন্তর। অন্তত তিন-চার বার। তবে এই সমস্ত রোগ দেখা দেওয়ার আগে থেকেই চাষিকে সতর্ক থাকতে হবে। এর জন্য বর্ষার আগে থেকেই মেটালাক্সিল এবং ম্যানকোজেবের মিলিত ওষুধ যা বাজারে রিডোমিল বলে পাওয়া যায় ০.২ শতাংশ হারে ১৫ দিন অন্তর দুই-তিন বার স্প্রে করতে হবে। যদি রোগ বাগানে ছড়িয়ে যায়, গাছগুলিকে বাগান থেকে দ্রুত বার করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
সাধারণ ভাবে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে চার-পাঁচ কিলোগ্রাম কাঁচা ফল পাওয়া যায়। যা শুকিয়ে নিলে ১-১.২৫ কিলোগ্রাম শুকনো ফল পাওয়া যায়। এর বাজার মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে গোলমরিচ চাষ করলে শুধু গোলমরিচ থেকে অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব— যা অন্য অনেক চাষ করেই পাওয়া সম্ভব নয়।
( শুভ্রজ্যোতি ঘোষ, কৃষি প্রযুক্তি আধিকারিক, কেন্দ্রীয় রোপণ ফসল গবেষণা কেন্দ্র, মোহিতনগর শাখা, জলপাইগুড়ি)
জলদি জবাব
জবাব দিচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকুল ইসলাম
• জলদি ফুলকপি ও বাধাকপি লাগিয়েছি। গোড়াপচা রোগের হাত থেকে কী ভাবে রেহাই পাব? কী সার দেব? অণুখাদ্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
মনোজ জানা, ক্যানিং
জলদি কপির বীজতলা বর্ষাকালে হয়। এই সময়ে গোড়াপচা রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। এর থেকে রেহাই পেতে উঁচু জায়গায় প্লাস্টিকের তাবু করে উপযুক্ত বীজ শোধন করে চারা তৈরি করতে হবে। জলদি শঙ্কর (হাইব্রিড) জাত নির্বাচন করুন। কারণ মূল বা নাবি সময়ের জাতগুলি এই সময়ে ভাল ফলন দেয় না। বীজতলায় চারাগাছ বেশি ঘন হলে ৭-৮ দিন বয়সেই পাতলা (৪-৫ সেমি দূরত্বে) করে দিতে হবে। এতে গোড়াপচা রোগের প্রকোপ কমবে। ২৫-৩০ দিনের স্বাস্থ্যবান চারাগাছ উঁচু জমিতে নালা ও ঢিপি পদ্ধতিতে রোপণ করতে হবে। বিঘা প্রতি ২.৫-৩ টন গোবর সারের সঙ্গে ১৫ কেজি ইউরিয়া, ৬ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ ও ৪৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। চাপান সার হিসাবে ৭.৫ কেজি ইউরিয়া ও ৩ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ ২১ ও ৪২ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে। বোরণ এবং মলিবডিনামের মতো অনুখাদ্য ৩০-৩৫ দিন অন্তর স্প্রে করলে উৎপাদন ভাল হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy