Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

বিজেপির সুরে শিবপুর, রিষড়া নিয়ে এনআইএ তদন্ত চাইল তথ্যসন্ধানী দল, নস্যাৎ মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য সোমবার ‘খায় না মাথায় দেয়’ বলে এমন তথ্যসন্ধানী দলকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। পুরো ঘটনা বিজেপিরই ঘটানো বলেও ফের সরব হয়েছেন তিনি।

Picture of Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৪
Share: Save:

হাওড়ার শিবপুর ও হুগলির রিষড়ায় সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনায় এনআইএ তদন্তের সুপারিশ করল মানবাধিকার সংক্রান্ত তথ্যসন্ধানী দল। যে দাবি আগেই তুলেছিল রাজ্য বিজেপি। রামনবমীর সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য উত্তেজনা তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওই দলের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য সোমবার ‘খায় না মাথায় দেয়’ বলে এমন তথ্যসন্ধানী দলকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। পুরো ঘটনা বিজেপিরই ঘটানো বলেও ফের সরব হয়েছেন তিনি।

পটনা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নরসিমা রেড্ডির নেতৃত্বে প্রাক্তন আইপিএস, আইনজীবী, মানবাধিকার কমমিশনের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার প্রমুখকে নিয়ে গঠিত তথ্যসন্ধানী দল রাজ্যে এসেছিল বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে অশান্তির ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে। বগটুই-কাণ্ডের পরেও তারা রাজ্যে এসেছিল। তবে এই দল সরকারি নয়, রাজনৈতিক কোনও প্রতিনিধিদলও নয়। তার উপরে ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়ে পুলিশ ওই দলকে শিবপুর ও রিষড়ায় যেতেই দেয়নি। এমতাবস্থায় এ দিন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন রেড্ডিরা। সেই রিপোর্টে তথ্যসন্ধানী দল বলেছে, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এনআইএ-কে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্য তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া, ‘নিরীহ’ ব্যক্তিদের উপর থেকে ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার এবং রাজ্য পুলিশের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলা মানুষের ভরসা ফেরাতে ও শান্তি রক্ষায় আরও কিছু দিন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার পক্ষেও সওয়াল করেছে তারা।

তথ্যসন্ধানী দল রাজভবনে যাওয়ার আগেই এ দিন নবান্নে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘ওই এলাকাগুলিকে অশান্ত করতে এসেছে কে? ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম! খায় না মাথায় দেয়? এটা কাঁচা লঙ্কা নাকি লবডঙ্কা? সব ব্যাপারে মানবাধিকার। মহিলা কমিশন। শিশু কমিশন। মিডিয়া কমিশন!’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, গোটা ঘটনাই বিজেপি ঘটিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অস্ত্র, বুলডোজ়ার, ট্রাক্টর নিয়ে কেন মিছিলে থাকবে? উন্মত্তের মতো নৃত্য করেছে বহিরাগতেরা! মুঙ্গের থেকে আনা হয়েছিল তাদের। এখানকার মানুষ একসঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে থাকে। প্রথম দিকে ওরা এত অস্ত্র নিয়ে বেরিয়েছিল, এক পক্ষ অপর পক্ষকে আক্রমণ করল, তখন পুলিশ দু’পক্ষকে আটকাতে গেলে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যেতে পারতেন। সেই জন্য পুলিশ কৌশলে সেই এক ঘন্টা ‘ফাউল প্লে’ বলব না, কৌশলে খেলেছে। তার পরেই সকলের মধ্যে সৌহার্দ বিনিময় হয় এবং এলাকায় শান্তি ফেরে।’’ প্রসঙ্গত, ঘটনার পরের দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কালকে যে পুলিশরা ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ভাবে পদক্ষেপ হবে, নিশ্চিন্তে থাকুন।’’

প্রাক্তন বিচারপতি রেড্ডির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। আমাদের আটকে দেওয়া হল! দেখলাম, সিপিএম শান্তি মিছিল করছে। তা হলে আমাদের আটকানো হল কেন? আমরা কি এতই ভয়ঙ্কর?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ নীরব দর্শক ছিল। যারা অশান্তি করছিল, তারা পুলিশকে দেখে বরং সাহস পেয়েছে। পুলিশ ভুক্তভোগীদেরই গ্রেফতার করেছে। রাজ্যের প্রধান ‘আমরা-ওরা’ করে দেখিয়ে যে ভাবে কথা বলেছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।’’

বিষয়টি নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই সরব হয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন বালুরঘাটে বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর শাসনে দিল্লিতে যে কেউ গিয়ে প্রতিবাদ, দাবিপত্র জমা দিতে পারে। কিন্তু হাওড়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে এক জন প্রাক্তন বিচারপতি-সহ যে দল এসেছিল, তাদেরও ঢোকার অনুমতি দেওয়া হল না। স্বরাষ্ট্র সচিবও তাদের সঙ্গে দেখা করলেন না। এর চেয়ে অগণতান্ত্রিক আর কী হতে পারে!’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তথ্যসন্ধানী দলের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলছেন। ভুলভাল বলছেন! প্রথমে বলেছিলেন পুলিশ অকম্মা। এখন বলছেন পুলিশ কী করবে? আমরা জানতে চাই বাস্তব কোনটা? ওঁর কাছে আগাম খবর থাকলে উনি ব্যবস্থা নিলেন না কেন?’’ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ওই দলকে যেতে দিলে কী অসুবিধা ছিল? লুকোনোর কি আছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee West Bengal NIA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE