Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গরিবের বান্ধবী পল্লবীর কারখানা

চাল কিনব, না স্যানিটারি ন্যাপকিন? মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী পরিবারের গৃহবধূ পল্লবী শাহকে ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলেন পরিচারিকা শিপ্রা দাস।

প্রস্তুতি: কারখানায় চলছে ন্যাপকিন তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতি: কারখানায় চলছে ন্যাপকিন তৈরির কাজ। —নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

চাল কিনব, না স্যানিটারি ন্যাপকিন? মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী পরিবারের গৃহবধূ পল্লবী শাহকে ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলেন পরিচারিকা শিপ্রা দাস।

প্রশ্নটা দিনের পর দিন মাথায় ঘুরপাক খেত পল্লবীর। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মেয়েদের কাছে কী করে সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়া যায়, ভাবতেন অহরহ। শেষ অবধি ঠিক করলেন, নিজেই একটা কারখানা খুলবেন। কোয়ম্বত্তূরের বিখ্যাত ‘প্যাড-ম্যান’ অরুণাচলম মুরুগানাথম-এরই মহিলা সংস্করণ যেন কলকাতা সংলগ্ন শহরতলিতে।

আদি সপ্তগ্রামের মিঠাপুকুরে সত্যিই কারখানা খুলে ফেলেছেন বছর চল্লিশের পল্লবী। এক মাস হল উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে দশটা করে আধুনিক মানের ন্যাপকিন, দাম মাত্র তিরিশ টাকা। পল্লবী নিজে এবং তাঁর ১৪ জনের দল গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন, মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের সচেতন করছেন এবং ছাতা খাটিয়ে বসে ন্যাপকিন বিক্রি করছেন। গ্রামীণ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে এই ন্যাপকিন রাখা হয়, তাই নিয়ে কথাবার্তা চলছে।

সরকারি প্রকল্পেই তো গ্রামের মেয়েদের এক টাকায় ন্যাপকিন সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু সেটা এখনও তেমন ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। গৃহবধূ, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক মহিলারা সরকারি প্রকল্পের আওতায় আসেননি। ফলে বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন যে রয়েছে, সে কথা অস্বীকার করছেন না কেউই। সেখানেই পল্লবীর উদাহরণ কুর্নিশ কুড়োচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, দেশের মাত্র ১২ শতাংশ মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। সে ক্ষেত্রে দশম শ্রেণি পাশ করা এই গৃহবধূর উদ্যোগকে প্রশংসা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও।

কিন্তু কারখানা খোলা তো সহজ কথা নয়! পুঁজি জোগাল পরিবারই। স্বামী-শাশুড়ি পাশে দাঁড়ালেন। আদি সপ্তগ্রামে পারিবারিক জমি ছিল। সেই জমিতেই কারখানা খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হল। ব্যবসা এগোনোর পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করল ‘ফিকি’র মহিলা সংগঠন ‘ফিকি ফ্লো’। কলকাতায় তাদের মঞ্চ ‘স্বয়ম’ পল্লবীকে শেখাল, ব্যবসা কী করে করবেন, মার্কেটিং কোন পথে এগোবে ইত্যাদি। পল্লবী বলছেন, বাড়ির কাজ সেরেই বেরিয়ে পড়তেন আশপাশের গ্রামগুলিতে সার্ভে করার কাজে। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল মানের ন্যাপকিনের প্যাকেট ৮০ টাকা থেকে শুরু। গরিব মেয়েদের কাছে সেটা বিলাসিতা।’’ তিনি চান ভবিষ্যতে আরও কম দামে ন্যাপকিনের প্যাকেট বাজারে আনতে।

পল্লবীর সাফল্যে ফিকি ফ্লো-র চেয়ারপার্সন অনুপমা সুরেখা খুবই খুশি। পল্লবী যে দরিদ্র মেয়েদের জন্য এমন চমকপ্রদ কাজ করেছেন, সেটা আরও অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে বলে তাঁর আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanitary Napkin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE