ন্যায্য দামে ওষুধ মিলছে না। তারিখে কারচুপি করে ওষুধ গছিয়ে দিচ্ছে অনেক দোকান। বহু দোকানে ভেজাল ওষুধের রমরমা।
অভিযোগ একটা নয়, ভূরি ভূরি। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। কারণ? যে-সংস্থার এগুলো দেখার কথা, সেই ড্রাগ কন্ট্রোলে লোকাভাব। শূন্য পদের সংখ্যা এত বেশি যে, পরিদর্শন-কর্মীর অভাবে রাজ্য জুড়ে ওষুধের দোকানগুলির উপরে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ড্রাগ কন্ট্রোল।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসেই ড্রাগ কন্ট্রোলের তরফে ওষুধের দোকান পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু কর্মী-ঘাটতি চরমে ওঠায় বছরে এক বারও সেটা হয়ে ওঠে না। ফলে কোন দোকানে কী ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তার মান যথাযথ কি না, কোন দোকান কী ভাবে কারচুপি করে মুনাফা লুটছে— তা দেখার ব্যবস্থাটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। থমকে রয়েছে অন্যান্য কাজও। রাজ্য জুড়ে বেআইনি ভাবে ওষুধ বিক্রি-সহ নানান অনিয়মের অভিযোগে প্রায় চারশো মামলা দায়ের হয়েছে।
ড্রাগ কন্ট্রোলে কর্মী-চিত্রটা কেমন?
কারিগরি এবং অ-কারিগরি দুই ধরনের পদই আছে ড্রাগ কন্ট্রোলের দফতরে। ওষুধ ব্যবসার উপরে নজরদারির কাজটা করেন মূলত কারিগরি কর্মীরাই। সেই কারিগরি কর্মী-পদের প্রায় ৫০ শতাংশই খালি। কলকাতার সদর অফিস-সহ রাজ্য জুড়ে ড্রাগ কন্ট্রোল অফিসগুলিতে ১৮০টি কারিগরি পদ রয়েছে। তার মধ্যে শূন্য ৯০টি!
অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি-সহ প্রায় ৫০ হাজার ওষুধের দোকান রয়েছে সারা রাজ্যে। সেগুলিতে নিয়মবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব ড্রাগ কন্ট্রোলের। আর সেই দফতরে ডিরেক্টর ও ইনস্পেক্টর মিলিয়ে পদের সংখ্যা ১৮০। তার ৯০টিই আপাতত খালি। ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তার কথায়, ‘‘জেলা স্তরে নজরদারির কাজটা নির্ভর করে ইনস্পেক্টরদের উপরে। কিন্তু ৯০টি ইনস্পেক্টর-পদের মধ্যে ৮৮টিই শূন্য। ফলে নজরদারি চালু রাখা অসম্ভব।’’ ওই কর্তা জানান, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় জাল ওষুধ চক্র যে খুবই সক্রিয়, সেটা তাঁরা জানেন। কিন্তু কর্মী-অফিসার না-থাকায় ন্যূনতম নজরদারি চালানোও সম্ভব হচ্ছে না।
ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা মানছেন, গ্রামীণ এলাকায় ওষুধের দোকানের উপরে বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন। কারণ, জাল ওষুধের কারবারিরা গ্রামাঞ্চলে বেশি সক্রিয়। শহরের বাসিন্দারা তুলনায় বেশি সচেতন। কিন্তু গ্রামগঞ্জে পরিদর্শনের অবস্থা তুলনায় অনেক বেশি খারাপ। পর্যাপ্ত নজরদারি না-থাকায় লাইসেন্স ছাড়াই দেদার ওষুধ বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। শুধু অবৈধ দোকান নয়, বৈধ দোকান থেকেও চিকিৎসকের লিখিত অনুমতি ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক-সহ নানা ধরনের বিপজ্জনক ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। আর মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ওষুধের দেদার ব্যবসা চলছে বৈধ ও অবৈধ, দু’রকম দোকানেই।
শহর ও গ্রামের মধ্যে সতর্কতা-সচেতনতায় তারতম্যের সুযোগ নিয়ে দুই এলাকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে অশুভ আঁতাঁত গড়েছেন বলে জানাচ্ছেন দফতরের এক কর্তা। গ্রামাঞ্চলে বৈধ দোকানে মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির প্রবণতা খুব বেশি। শহর থেকে মেয়াদ-ফুরোনো ওষুধ নিয়ে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে রমরমিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ক্রেতা সেই কারচুপি ধরতে পারছেন না। মেয়াদ-ফুরোনো ওষুধই চোখ বুঝে খাচ্ছেন। ‘‘মেয়াদ-ফুরোনো ওষুধ এক অর্থে জাল ওষুধই। তার নানা ধরনের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে,’’ বলছেন ড্রাগ কন্ট্রোলের ওই কর্তা।
সব জানা সত্ত্বেও রোগ নিরাময়ের নামে এই বিপজ্জনক ব্যবসা চলতে দেওয়া হচ্ছে কেন?
ড্রাগ কন্ট্রোলের এক আধিকারিক জানান, জাল ওষুধের কারবারিরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এ রাজ্যে নজরদারির অভাব যে ষোলো আনা, অসাধু কারবারিদের সেটা অজানা নয়। কোটি কোটি টাকায় মুনাফার লোভে মূলত বিহার ও ঝাড়খাণ্ডের জাল ওষুধ কারবারিরা জাল ওষুধ পাচার করে। নজরদারির অভাবে তা পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে।
নজরদারির অভাবে অ্যালোপ্যাথি তো বটেই, হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিয়েও বিড়ম্বনা বাড়ছে। এক ড্রাগ আধিকারিকের কথায়, হোমিওপ্যাথি ওষুধের কোনও নির্দিষ্ট দরদাম থাকে না। একই হোমিওপ্যাথি ওষুধের আলাদা আলাদা নাম দেয় বিভিন্ন কোম্পানি। যথাযথ নজরদারি ছাড়া তার গুণমান যাচাই করা সম্ভব নয়।
নজরদারিতে ঘাটতির মূল কারণ যদি হয় কর্মীর অভাব, পর্যাপ্ত সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না কেন?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য সরকার শূন্য পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। অনলাইনে আবেদনও গ্রহণ করা হয়। ওই পর্যন্তই। তার পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশেষ এগোয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy