Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভারতে জাল টাকার মাথা বাংলাদেশে ইউপি সদস্য

ভারতে জাল নোট পাচারের অন্যতম পাণ্ডা হিসেবে এনআইএ যাঁকে চিহ্নিত করেছে, তিনিই আবার বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ ভোটে (ইউপি) জিতে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন! এমন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের আর্জি জানিয়ে বাংলাদেশকে সরকারি ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

ভারতে জাল নোট পাচারের অন্যতম পাণ্ডা হিসেবে এনআইএ যাঁকে চিহ্নিত করেছে, তিনিই আবার বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ ভোটে (ইউপি) জিতে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন! এমন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের আর্জি জানিয়ে বাংলাদেশকে সরকারি ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর— মালদহের দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে এ দেশে জাল নোট পাচারের মূল কারিগর এই ব্যক্তি, যিনি আদতে জামাতে ইসলামির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ইদানিং বাংলাদেশের শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছেন। গোয়েন্দারা জেনেছেন, আওয়ামি লিগের স্থানীয় নেতাদের বিপুল টাকা দিয়েই সাম্প্রতিক নির্বাচনে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হয়েছেন এই ব্যক্তি।

গোয়েন্দারা বলছেন, চোরাচালানের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পদ্মা-পা়ড়ের শিবগঞ্জ এলাকা। এই ব্যক্তি সেখানকার জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরে নিজের জাল নোট ও চোরাচালানের ব্যবসা বাড়াতে যে বাংলাদেশের প্রশাসন ও সীমান্তরক্ষীদের ওপর প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এমনকী জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র সঙ্গেও এই ব্যক্তির যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রতি যে এম ল্যাট (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি) স্বাক্ষর হয়েছে, সেই অনুযায়ী এই ব্যক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রাথমিক তথ্য পেশ করে তাকে গ্রেফতারের অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। এই চুক্তি করে একে অপরকে অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়া, অপরাধের কিনারা করা ও সন্ত্রাস ঠেকাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ।

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রের খবর, পাকিস্তানের সিকিওরিটি প্রেসে (যেখানে সে দেশের নোট ছাপা হয়) ছাপা ভারতীয় টাকার জাল নোট জলপথ ও আকাশপথে দুবাই হয়ে ঢাকা বা চট্টগ্রামে পৌঁছয়। সেখান থেকে যায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার মনাকষায়। সেখানে ভারতীয় জাল নোটের এক রকম পাইকারি বাজার বসে, যার এক জন প্রধান ক্রেতা এই ব্যক্তি।

মনাকষায় কেনা জাল নোট এর পরে নিজের লোকেদের দিয়ে ভারতে চোরাচালান করে এই ব্যক্তি। গোয়েন্দারা জেনেছেন, আসল ভারতীয় মুদ্রায় ২৮০ টাকায় বিক্রি করা হয় হাজার টাকার জাল নোট। নগদ টাকা না-দিতে পারলে অনেক সময়ে গরু দিয়েও ওই দাম চোকায় ভারতীয় জোল নোটের ক্রেতারা।

এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘এই ব্যক্তি রীতিমতো অবস্থাপন্ন। দৌলতপুর সীমান্ত ঘেঁষা তার বিশাল আমবাগান। সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষে অনেকটা জায়গা জুড়ে তাঁর চাষের জমিও আছে।’’ শুধু জাল নোট নয়, অস্ত্র, মাদক, নেশায় ব্যবহৃত কাশির সিরাপও চোরাচালানে যুক্ত এই ব্যক্তি। নিজের লোকেদের রীতিমতো টার্গেট বেঁধে দিয়েছেন তিনি— দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে এক কোটি টাকার জাল নোট পাচার করতে হবে। কী ভাবে খোঁজ মিলল এই ব্যক্তির? এনআইএ সূত্রের খবর, এ’বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জে ধরা পড়ে দৌলতপুরের আনিকুল ইসলাম ও সেলিম শেখ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই ব্যক্তির কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তার পর ১১ এপ্রিল শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে এনআইএ গ্রেফতার করে দৌলতপুরের আলম শেখকে।
এই ব্যক্তিই যে দৌলতপুর সীমান্তকে কেন্দ্র করে চলা জাল নোটের পাচার চক্রটির মাথা, আলমের কাছ থেকেই সেটা জানা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fake note Bangladesh Racket Union council member
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE