Advertisement
E-Paper

সই জাল, অভিযোগ ত্রিনেত্র-র অডিটরের

গত লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূলকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ‘ধার’ দেওয়া ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনলেন রবিকুমার ভট্টর নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ২০১২-’১৩ এবং ২০১৩-’১৪ আর্থিক বর্ষে ত্রিনেত্র-র ব্যালান্স শিটে অডিটর হিসেবে নাম রয়েছে এই ভট্টরের। যদিও ভট্টরের দাবি, তাঁর সই ও রবার স্ট্যাম্প জাল করে তৈরি করা করা হয়েছিল ওই দু’টি অডিট রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬

গত লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূলকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ‘ধার’ দেওয়া ত্রিনেত্র কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনলেন রবিকুমার ভট্টর নামে এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ২০১২-’১৩ এবং ২০১৩-’১৪ আর্থিক বর্ষে ত্রিনেত্র-র ব্যালান্স শিটে অডিটর হিসেবে নাম রয়েছে এই ভট্টরের। যদিও ভট্টরের দাবি, তাঁর সই ও রবার স্ট্যাম্প জাল করে তৈরি করা করা হয়েছিল ওই দু’টি অডিট রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজারের হাতে আসা ত্রিনেত্র-র অডিট রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মের মালিক হিসেবে রবিকুমার ভট্টরের সই দু’বছর দু’রকম। ভট্টর নিজেও এ দিন বলেন, ‘‘ওই নথিতে আমার ও সংস্থার নাম-রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও রবার স্ট্যাম্প ঠিক রয়েছে। কিন্তু সইটা একেবারেই মিলছে না। দু’টো ব্যালান্স শিটে দু’রকমের সই রয়েছে।’’ ভট্টরের ধারণা, তাঁর দায়ের করা অন্য কোনও সংস্থার ব্যালান্স শিট দেখেই ওই সব তথ্যগুলি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সই মেলাতে পারেনি জালিয়াতেরা।

তবে ত্রিনেত্র-র ব্যাপারে দিন কয়েক আগে যখন আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে ভট্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘অনেকেই দালাল বা অফিস পিওনের মাধ্যমে কোম্পানির আয়ব্যয়ের নথি পাঠায়। আমি তা দেখেই অডিট রিপোর্ট দিই। সে ভাবেই হয়তো ত্রিনেত্র এসেছিল।’’ তা হলে এ দিন কেন সই জালিয়াতির দাবি করছেন তিনি? ভট্টরের বক্তব্য, বুধবার একটি সূত্র থেকে সংস্থার ব্যালান্স শিটটি পান তিনি। সেটি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার পরে সই জালিয়াতির কথা বুঝতে পারেন। তার পরেই পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিকুমার একটি চিঠি দিয়ে সই জালের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র জমা দেননি। পুলিশ কর্তাদের বক্তব্য, এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দিতে হয়। না হলে অভিযোগটি কতটা সত্য, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে তাই পুরোপুরি ক্লিনচিট দেওয়া যায় না।’’ এ ব্যাপারে ভট্টরের বক্তব্য, তিনি ব্যালান্স শিটের প্রতিলিপি নিজের কাছে রাখেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যদি পরে ওগুলো জোগাড় করতে পারি, তা হলে পুলিশকে দেব।’’

তবে শুধু সই ও স্ট্যাম্প জাল করার অভিযোগ নয়, ত্রিনেত্র-র ওই দু’বছরের অডিট রিপোর্টে আরও বিস্তর গরমিল রয়েছে। যেমন, ২০১২-’১৩ সালের ব্যালান্স শিটে দেখা যাচ্ছে, কারেন্ট লায়বিলিটি খাতে ‘শর্ট টার্ম বরোইংস’ (স্বল্প মেয়াদি ধার) হিসেবে ৩৭ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা এবং সম্পত্তি খাতে ‘শর্ট টার্ম লোন অ্যান্ড অ্যাডভান্স’ হিসেবে ৪৬ কোটি ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু পরের বছরের ব্যালান্স শিটে ২০১২-’১৩ সালের হিসেব উল্লেখ করার সময় ওই টাকার কথা লেখা হয়নি। একই বছরের অডিটেড হিসাব কী করে দু’জায়গায় দু’রকম হল, তার কোনও ব্যাখ্যা অডিট রিপোর্টে নেই!

সারদা মামলার অন্যতম আবেদনকারী ও পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অমিতাভ মজুমদার বলেন, ‘‘এই অডিট রিপোর্ট স্বচ্ছ ও সঠিক হিসেবের প্রতিফলন নয়।

আইনেরও পরিপন্থী।’’ এমন হিসেব দেখে সিবিআই এবং ইডি-র তদন্তকারীরাও স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন বলে সংস্থা সূত্রের খবর। ত্রিনেত্র-র হিসেবপত্র এবং তার অডিটর হিসেবে যাঁর নাম রয়েছে, সেই রবিকুমার ভট্টরের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। এমনিতে সংস্থার দুই ডিরেক্টর মনোজ শর্মা এবং শশীকান্ত দাসের কোনও খোঁজ মিলছে না। বুধবার আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে পিকনিক গার্ডেনে মনোজের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেটা পলেস্তারা খসা এক চিলতে ঘর। মনোজের মা রেশমা দাবি করেন, গত ছ’মাস ধরে ছেলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। অন্য দিকে, খিদিরপুরে শশীকান্তের বাড়ির খোঁজে গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানি নিবন্ধকের খাতায় উল্লিখিত ঠিকানায় কোনও বাড়িই নেই!

এই অবস্থায় সিবিআই তদন্তকারীরা ভেবেছিলেন, ত্রিনেত্র-র হালহকিকত জানতে অডিটরের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই অডিটরই এ দিন সই জালিয়াতির অভিযোগ করায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। রবিকুমার নিজে কি এই দুই সংস্থাকে জালিয়াতির খবর জানাবেন? প্রশ্নটা শুনে থতমত খেয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পরে তাঁর জবাব, ‘‘আমি নিজে থেকে কিছু জানাব না। তবে ওরা যদি ডাকে, নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা দেব।’’


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

ত্রিনেত্র-র এই অডিট রহস্যের সঙ্গে অনেকেই আবার তৃণমূলের অডিট রহস্যের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তৃণমূল তাদের আয়ব্যয়ের যে হিসেব আয়কর দফতর এবং নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে তাতে অডিটর হিসেবে যাঁর সই রয়েছে, সেই প্রাণকুমার চক্রবর্তীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি অ্যালঝাইমার্স রোগে আক্রাম্ত। তাঁর বাড়ির লোকেরা দাবি করেন, গত চার বছর ধরে অডিটের কোনও কাজই করেননি তিনি (আনন্দবাজার পত্রিকা ৭ এপ্রিল, ২০১৫)।

তৃণমূলের অডিট রিপোর্টে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে প্রাণকুমারবাবুর সই থাকলেও তাঁর পুরো নাম, ফার্মের রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ায় (আইসিএআই) তাঁর সদস্য সংখ্যা (রেজিস্ট্রেশন নম্বর) দেওয়া ছিল না। অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় এগুলি উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

এমন অডিট রিপোর্ট কী ভাবে নির্বাচন কমিশন এবং আয়কর দফতরে জমা পড়ল সেই প্রশ্ন তুলেছে ইডি। বিষয়টি নিয়ে আইসিএআই-এর দ্বারস্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশনও।

এ বার ত্রিনেত্র-র ব্যালান্স শিটে অডিটর হিসেবে যাঁর নাম রয়েছে, তিনিও জালিয়াতির অভিযোগ তোলায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

trinetra consultant private limited Ravi Kumar Bhatt audit report Police trinamool tmc saradha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy