Advertisement
২২ মে ২০২৪

ছাত্রের মৃত্যু কী ভাবে, তদন্ত দাবি পরিবারের

পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাপান-উতোর তৈরি হল পরিবার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে। বাস থেকে অসাবধানতা বশত পড়ে গিয়ে চোট পেয়েই বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে কলেজের তরফে দাবি করা হয়েছে।

দুর্গাপুরের হাসপাতালে সন্দীপের (ইনসেটে) পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুরের হাসপাতালে সন্দীপের (ইনসেটে) পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও কোতুলপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

পলিটেকনিক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাপান-উতোর তৈরি হল পরিবার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে। বাস থেকে অসাবধানতা বশত পড়ে গিয়ে চোট পেয়েই বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে কলেজের তরফে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মৃতের পরিজনদের অভিযোগ, নিছক দুর্ঘটনায় এই মৃত্যু নয়। যদিও এ ব্যাপারে রবিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি তাঁরা।

বর্ধমানের আউশগ্রামের চণ্ডীপুরে এক পলিটেকনিক কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়তেন কোতুলপুরের রামডিহা গ্রামের সন্দীপ মুখোপাধ্যায় (১৯)। থাকতেন কলেজের হস্টেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্দীপকে তাঁর কিছু সহপাঠী মাথায়, ঘাড়ে চোট নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে। সন্দীপের মোবাইল থেকে ফোন করে খবর দেওয়া হয় তাঁর বাড়িতে। বাড়ির লোকজন গিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো দুর্গাপুরের একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। রবিবার ভোরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, সে দিন বিকেলে ক্লাস শেষ হওয়ার পরে বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরোন সন্দীপ। তাঁর সহপাঠীদের একাংশের দাবি, সন্দীপ যে বাসে চড়েন সেটির পিছনের দিকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। অভিরামপুর ও মানকরের মাঝামাঝি এক জায়গায় হাত ফস্কে রাস্তায় পড়ে যান। তখনই গুরুতর চোট পান। সেই বাসেই ছিলেন সন্দীপের কয়েক জন সহপাঠী। তাঁরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (টিচার ইন-চার্জ) নাসিমুদ্দিন আনসারি বলেন, ‘‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। যে বাসে দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে আমাদের অন্য শিক্ষক ও পড়ুয়ারাও ছিলেন।’’

কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, সন্দীপের ঘাড়ে-মাথায় চোট ছিল। নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে, জুতো ক্ষয়ে গিয়েছে। এ সব থেকে নিছক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে মনে করছেন না তাঁরা। চিকিৎসার সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফেও বিশেষ সহযোগিতা মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। সন্দীপের বাবা বলরামবাবু বলেন, ‘‘বাড়ি গেলে আগে আমাদের ফোন করে জানাত ছেলে। সে দিন তা করেনি। অথচ, সহপাঠীরা বলেছে, ও বাড়ি যাবে বলে বেরিয়েছিল। এমনকী, হস্টেলে সই করে বেরোয়নি। তাই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা প্রকৃত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’

এ দিন হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্দীপের মা চন্দনাদেবী। কোতুলপুরের বাড়িতে বসে সন্দীপের দিদি প্রিয়াঙ্কা রায়ের অভিযোগ, ‘‘ভাই পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। আমার সন্দেহ, হিংসে থেকে র‌্যাগিং করে ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে।’’ তাঁর স্বামী স্বদেশ রায়েরও বক্তব্য, ‘‘শুনেছি সন্দীপের জামা-প্যান্টও ছেঁড়া ছিল। র‌্যাগিং থেকেও এমনটা হতে পারে।’’ এ ব্যাপারে কোতুলপুর থানায় অভিযোগ জানাবেন বলেও দাবি করেন তিনি। মৃত্যুর খবর আসার পরে শোকের ছায়া গোটা রামডিহা গ্রামে। সন্দীপের বন্ধু শুভ মাইতি বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করেছিল ও। তার পরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেল। এমন ভয়ঙ্কর খবর পাব, ভাবতেও পারছি না।’’

কলেজের তরফে অবশ্য জানানো হয়, ওই ছাত্রের চিকিৎসার জন্য পরিবারের হাতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন ‘‘আমরা যতটা সম্ভব পাশে থেকেছি। এই ঘটনার পিছনে অন্য কিছু নেই।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাথায়-ঘাড়ে গুরুতর চোট ছিল সন্দীপের। হাসপাতালে ভর্তি করানোর আগে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পরিষ্কার হবে বলে পুলিশ মনে করছে। সন্দীপের জ্যাঠা স্বপনবাবুর দাবি, ‘‘দুর্ঘটনা হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। কী ঘটেছে, তদন্ত করে বের করা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

investigation family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE