Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Bimal Gurung

স্বামীর কফিন আঁকড়ে বিউটির বিলাপ, ‘কখন আসবে, এসো তাড়াতাড়ি’

মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। পাহাড় থেকে উড়িয়ে মৃত সাব ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের দেহ নিয়ে আসা হয়েছে তাঁর মধ্যমগ্রামের বাড়িতে।

শোকস্তব্ধ স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

শোকস্তব্ধ স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ১৯:৪২
Share: Save:

পরনে কমলা সালোয়ার-কুর্তা। শাঁখা, সিঁদুর এখনও জ্বলজ্বল করছে। কফিনের সামনে থেকে এক বারের জন্য এক ইঞ্চিও নড়েননি। সারা ক্ষণ প্রায় আঁকড়ে রেখেছেন স্বামীর দেহ। মাঝে মাঝে সংজ্ঞাও হারিয়ে ফেলছেন।

মুখে একই কথা, ‘‘কি গো, কখন আসবে? এসো না, প্লিজ! কোথায় গেলে?’’

মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। পাহাড় থেকে উড়িয়ে মৃত সাব ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের দেহ নিয়ে আসা হয়েছে তাঁর মধ্যমগ্রামের বাড়িতে। যেটুকু সময় শববাহী গাড়িতে বা বিমানে রাখতে হয়েছে দেহ— তার বাইরে বিউটি মালিককে এক বারের জন্যও সরানো যায়নি অমিতাভের কাছ থেকে।

শনিবার দুপুরে বাগডোগরা থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছয় অমিতাভর দেহ। তার পর শববাহী গাড়িতে মধ্যমগ্রাম থানা। সেখান থেকে বাড়ি হয়ে নিমতলা শ্মশান। গোটা সময়টাই স্ত্রী বিউটিকে এ ভাবেই দেখা গেল। চোখের জলও মুছতে পারছেন না। একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছেন। সঙ্গে চিত্কার করে স্বামীর কাছে জানতে চাইছেন, ‘‘এখনও বাড়িতে এলে না! আর কখন আসবে। সবাই এসে গিয়েছে তো! তুমি কখন ফিরবে?’’

আরও পড়ুন: চোখের জলে অমিতাভকে শেষ বিদায়

অমিতাভের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল মাস ছ’য়েক আগে। স্বামীর কর্মসূত্রে দার্জিলিঙে ছিলেন বারাসতের মেয়ে বিউটি। কিন্তু, শুক্রবার সকালেই খবর আসে, বিমল গুরুঙ্গকে ধরতে গিয়ে মোর্চা নেতার সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে গুলির লড়াইতে মারা গিয়েছেন ওই সাব ইনস্পেক্টর। সিকিম সীমানা ঘেঁষা লেপচা বস্তি থেকে দার্জিলিঙে স্বামীর দেহ আসতেই ছুটে গিয়েছিলেন সাদা চাদরে ঢাকা কফিনের কাছে। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘কী কিনতে যাবে? চলো না, যা কিনতে চাও কিনবে চলো। এসো। তাড়াতাড়ি।’’ পাশে থাকা মহিলা পুলিশকর্মী তাঁকে সামলাতে গেলে, ঝটকায় সরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে।

ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্ত্রী বিউটি মালিক। নিজস্ব চিত্র।

এ দিনও বিউটি সেই ঘোর থেকে বেরতে পারেননি। বছর তেইশের ওই তরুণীকে সামলাতেও পারেননি কেউ। এলাকার বাসিন্দা, পুলিশ, মন্ত্রী— মানুষে মানুষে ছয়লাপ। কিন্তু, তাঁর কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। তিনি একনাগাড়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। জানতে চাইছেন, কখন আসবে অমিতাভ। আর তার মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: কোথায় বিমল? ড্রোনের সাহায্যে জোরদার তল্লাশি জঙ্গল-পাহাড়ে

অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন অমিতাভের মা গীতাদেবীও। তিনি কাঁদতে কাঁদতে ছেলের কাছে জানতে চাইছেন, কেন এমন হল? বাবা সোমেন মালিক ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছেন, বিমল গুরুঙ্গের কঠোর শাস্তি চাই। কিন্তু, বিউটি সে সবের মধ্যেই নেই। তিনি রয়েছেন স্বামীর সঙ্গে। কফিনের গা লেপ্টে। মুখে সেই কথা, ‘‘এসো না, প্লিজ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE