প্রতীকী ছবি।
নিয়ম করে বেরিয়ে পড়ছেন ওঁরা।
গাঁয়ের মন্দিরে নিত্যপুজো শেষে সটান মাঠে হাজির হয়ে ইসলামপুরের পুরোহিত দোলন ঠাকুর বলছেন, ‘‘কী হে, তোমরা এ বারও গম-টম বুনছো না তো? ভুলেও গমের কথা ভেবো না। লোকসানের অন্ত থাকবে না কিন্তু!’’
শুক্রবার জুম্মার নমাজের পরে বারুইপাড়ার মসজিদের মাইকেও শোনা যাচ্ছে— একটি বিশেষ ঘোষণা। ইমাম জাকির হোসেন অনুরোধ করছেন, ‘ভাই সকল, বিপদ এখনও কাটেনি। গম বুনলে কিন্তু ফের খেসারত দিতে হবে’।
নাবালিকার বিয়ে বন্ধ, পোলিও, ডেঙ্গি কিংবা বার্ড ফ্লু নিয়ে ঘেমেনেয়ে সচেতনতার প্রচার পর্বের পরে এ বার প্রশাসনের অনুরোধে পুরোহিত-ইমামদের কাঁধে দায় চেপেছে গম বোনায় চাষিদের নিরুৎসাহিত করার। কারণ, বছর দু’য়েক ধরে ঝলসার হানায় উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলায় বিঘের পর বিঘে জমির গম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চাষিদের বোঝাবে কে? ঝলসার ক্ষত নিয়ে গম চাষেই ঝুঁকে আছেন তাঁরা। এ বার তাই বিকল্প চাষের প্রস্তাব দিতেই কৃষি দফতর ইমাম-পুরোহিতদের প্রচারে নামিয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে ঝলসার আক্রমণে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সীমান্ত উজিয়ে সে রোগ সেঁধিয়ে গিয়েছিল এ পার বাংলায়। গত মরসুমে সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে গমের বিকল্প চাষের নিদান দিয়েছিল কৃষি দফতর। জেলা জুড়ে প্রচারও চলেছিল। তাতে কান না দিয়ে অনেকেই গম বুনেছিলেন। কিন্তু ফের ঝলসার আক্রমণ শুরু হয়।
মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুণ্ডু জানাচ্ছেন, ছত্রাককঘটিত ঝলসা রোগটা দ্রত ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরেই নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির গম পুড়িয়ে দিতে হয়েছে। চাষিরা কৃষি দফতরের নিষেধ শুনলে ওই লোকসান হতো না। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘প্রচারে কোনও খামতি না রাখতেই পুরোহিত ও ইমামদের সঙ্গে নিয়েছি। কারণ, গাঁ-গঞ্জে ওঁদের কথা লোকজন ফেলতে পারেন না।’’
সম্প্রতি রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সঞ্জীব চোপড়া ও কৃষি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অন্য জেলার কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে আগামী দু’বছর গম না বোনার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাকি জেলাগুলিকে সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
তাপসবাবু জানান, সাময়িক ভাবে দু’বছর গম চাষ বন্ধ রাখলে ঝলসার আক্রমণ অনেকটাই কমে। সেই কারণেই চাষিদের সতর্ক করা। গমের বিকল্প হিসেবে ওই জমিতে মুসুর, খেসারি, ছোলা, মটর, সর্ষে, ও সূর্যমুখী চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি দফতর থেকে নিখরচায় বীজ দেওয়া হবে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, রাজ্য যাতে উৎপাদিত ওই শস্য কেনে, সে বিষয়টিও দেখা হবে।
হরিহরপাড়ার মন্টু মণ্ডল, ইসলামপুরের সারাউদ্দিন শেখেরা বলছেন, ‘‘এর আগে কৃষি দফতরের কথা না শুনে খুব শিক্ষা হয়েছে। এ বছর তো দেখছি ইমাম, পুরোহিতরাও নিষেধ করছেন। ঠিক করেছি, আর যাই করি না কেন, গম চাষ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy