Advertisement
E-Paper

সরকারি শিবিরে চাষিদের ভিড় কই

শুরুর দিনের ছবিটা যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, মাস ফুরোতে সেটাই বহাল রইল। সরকারি ধান কেনার শিবিরে চাষিদের লম্বা লাইন কই!এ বছর রাজ্য সরকার ধান কিনবে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন। ২৮৫টি শিবিরে ধান কেনা শুরুও হয়েছে। কিন্তু যা গতি, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়েই চিন্তায় খাদ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩

শুরুর দিনের ছবিটা যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, মাস ফুরোতে সেটাই বহাল রইল। সরকারি ধান কেনার শিবিরে চাষিদের লম্বা লাইন কই!

এ বছর রাজ্য সরকার ধান কিনবে ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন। ২৮৫টি শিবিরে ধান কেনা শুরুও হয়েছে। কিন্তু যা গতি, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা নিয়েই চিন্তায় খাদ্য দফতর। পরিস্থিতি বুঝে ১২০টি চালকলে ধান কেনার শিবির করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নিজেই মানছেন, ‘‘এত দিনে অন্তত এক-দেড় লক্ষ মেট্রিক টন ধান আমাদের গুদামে ঢুকে যাওয়া উচিত ছিল। সেখানে মাত্র ২৯ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন কেনা গিয়েছে।’’

ধান কেনার গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে বুধবার খাদ্যভবনে হুগলি, নদিয়া ও দুই চব্বিশ পরগনার চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। সেখানে চাষিদের শিবিরে গিয়ে ধান বিক্রিতে অনীহার কয়েকটি কারণ জানান চালকল মালিকেরা ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, এ বছর থেকে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ধানের দাম সরাসরি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নগদ বা চেক নিতে অভ্যস্ত চাষিরা বিষয়টি বুঝতে না পেরে শিবিরে যাচ্ছেন না। আবার ব্যাঙ্ক থেকে এক লপ্তে টাকা তোলার সুযোগ নেই বলেও শিবির থেকে মুখ ফিরিয়েছেন অনেকে। কারণ নোট বাতিলের জেরে সপ্তাহে ২৪ হাজার মেলার কথা থাকলেও মফস্‌সলে বা গ্রামাঞ্চলে হাজার দশেকের বেশি টাকা দিচ্ছে না ব্যাঙ্ক।

আরও সমস্যা আছে। বেশির ভাগ চাষির অ্যাকাউন্ট সমবায় ব্যাঙ্কে। অথচ খাদ্য দফতরের নিয়মে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলা হয়েছে। ফলে ওই চাষিরা শিবিরে যেতে চাইছেন না। খাদ্য দফতরের এক কর্তার যদিও দাবি, যাঁরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করতে পারেননি তাঁদের ক্ষেত্রে কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। চাষিরা নগদ হাতে পেতে কম দামেও ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘অর্থসচিব, রাজ্যের নোডাল ব্যাঙ্ক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা মেটাতে হবে। ধান বিক্রির পরে প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে চাষিরা যাতে টাকা
তুলতে পারেন, তা নিশ্চিত করা আমাদের উদ্দেশ্য।’’

জিরো ব্যালেন্স কিসান ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিসান ক্রেডিট কার্ড বা রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় ধান বিক্রয় কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন পত্রের যে কোনও একটি নথি দেখালেই চাষিকে ধান বিক্রির সব টাকা এক সঙ্গে তোলার সুবিধা দেওয়ার দাবি জানানো হবে বলেও ঠিক হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ধান বেচাকেনার উপরে নজরদারি চালাতে টাস্কফোর্সও গড়া হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, গত আর্থিক বছরে ধান সংগ্রহ বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের পাওনা রয়েছে ১৬০৪ কোটি টাকা। কিন্তু তা মেলেনি। এ মরসুমে ধান কেনার জন্য খাদ্য দফতরকে রাজ্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু নগদ না পেলে ধান বিক্রিতে অনীহা থাকায় সমস্যা কাটছে না।

ঘটনা হল, খোলা বাজারে ধানের দাম চলছে ক্যুইন্টাল প্রতি ১১০০ টাকা। অথচ শিবিরে বিক্রি করলে উৎসাহ ভাতা-সহ দাম ১৪৯০ টাকা। তার পরেও চাষিরা শিবিরে যাচ্ছেন না।

তাই আরও ১২০টি চালকলে ধান কেনার শিবির করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এ দিন জানান বেঙ্গল রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র আব্দুল মালেক। চাষিরা সেখানে সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবেন। বর্ধমানের গলসি ১ ও ২ ব্লকের চারটি চালকলে এই শিবির প্রথম খোলা হবে। মন্ত্রী নিজেও শনিবার বর্ধমানে গিয়ে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

paddy farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy