Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

হিমাচল থেকে বাংলা, চাষিদের মাথায় হাত

দু’জনে দেশের দু’প্রান্তে। তবে ওঁদের সমস্যাটা এক। হিমাচলের শিমলার বাসিন্দা রবীন্দ্র চহ্বান ও পশ্চিমবঙ্গের বেড়াচাঁপার শামসুরকে পথে বসিয়ে দিতে চলেছে এ বারের ‘গরম’ শীত। রবীন্দ্র হিমাচলের আপেল চাষি। শামসুর শীতে ফুলকপি ফলান।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:০১
Share: Save:

দু’জনে দেশের দু’প্রান্তে। তবে ওঁদের সমস্যাটা এক। হিমাচলের শিমলার বাসিন্দা রবীন্দ্র চহ্বান ও পশ্চিমবঙ্গের বেড়াচাঁপার শামসুরকে পথে বসিয়ে দিতে চলেছে এ বারের ‘গরম’ শীত।

রবীন্দ্র হিমাচলের আপেল চাষি। শামসুর শীতে ফুলকপি ফলান। আবহাওয়ার রকম-সকম দেখে দু’জনেরই মাথায় হাত। নভেম্বরের শেষ ইস্তক কখনও কুয়াশা, কখনও বা অস্বাভাবিক গরমে শামসুরের খেতে কপির পাতা কুঁকড়ে গিয়েছে। ফুল এসেছে দেরিতে। অনুকূল পরিবেশ না-থাকায় ফুল বাড়তেই পারছে না। ‘‘এই সময়টায় এক-একটা ফুলকপির সাইজ হয় ফুটবলের মতো। এ বার ক্যাম্বিস বলও হল না!’’— আক্ষেপ করছিলেন শামসুরের ভাই বাবলু।

শামসুরের দৃঢ় বিশ্বাস, শীতটা ঠিকঠাক পড়লে এটা হতো না। সেই মাঝ ডিসেম্বরে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় এক দিন শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে, আর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ক’দিন তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রির কাছাকাছি। পৌষ পেরিয়ে মাঘ এল, দক্ষিণবঙ্গে শীতের দৌড় এটুকুই।

হিমাচলের রবীন্দ্রও বৃষ্টি-বরফের প্রতীক্ষায় থাকতে থাকতে মুষড়ে পড়েছেন। ওখানে রাতের তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রির নীচে নামেনি। সর্বোচ্চ উঠেছে ২০ ডিগ্রিতে। ‘‘ভাল আপেল হবে কী করে?’— খেদ রবীন্দ্রের। তিনি জানাচ্ছেন, আপেলের ভাল ফলনের জন্য বেশ ক’দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি থাকতে হবে। সর্বোচ্চ কখনওই ১৫ ডিগ্রি পেরোবে না। অথচ এ মরসুমে হিমাচল-উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে অক্টোবর থেকে সেই যে তাপমাত্রা চড়ে রয়েছে, আর নামার নাম নেই।

দেশ জুড়ে শীতের এমন পিছটান কেন?

আবহবিদদের ব্যাখ্যা: এ শুধু হিমাচল, পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের সমস্যা নয়। বিশ্ব জুড়েই শীত এ বার ভেল্কি দেখাচ্ছে। দিল্লির মৌসম ভবনের এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘মার্কিন মুলুকে ডিসেম্বরের বন্যায় ২৮ জন মারা গিয়েছে। সে দেশের নানা শহরে বড়দিন উদ্‌যাপন হয়েছে ২০ ডিগ্রির গরমে। দক্ষিণ আফ্রিকায় খরায় জ্বলেছে, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল ছড়িয়েছে। আবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় তল্লাটে দাপিয়ে বেড়িয়েছে হারিকেন।’’

এবং এ সবের পিছনে স্থানীয় কারণ ছাড়াও ‘এল নিনো’ হাত দেখছেন আবহবিদদের অনেকে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ— গত কুড়ি বছরে এ বারই এল নিনো সবচেয়ে শক্তিশালী। দ্য ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনস ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার জানাচ্ছে, ১৯৫০ থেকে যত এল নিনোর রেকর্ড রয়েছে, প্রতিপত্তির নিরিখে এ বারেরটা তালিকায় প্রথম তিনের মধ্যে থাকবে। কত দিন স্থায়ী হবে এর প্রভাব?

নাসা’র উপগ্রহ-চিত্রের ভিত্তিতে আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, আরও ক’মাস এর আঁচ টের পাওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের ‘দুষ্টু ছেলে’টি আগামী গ্রীষ্ম, এমনকী বর্ষার স্বাভাবিক ছন্দও ব্যাহত করতে পারে। বস্তুত গত বছর ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষা দারুণ ভাবে ইনিংস শুরু
করেও এল নিনোর পরাক্রমে ঝিমিয়ে যায়। অগস্টে সারা দেশে বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়ায় ২২.৪%, যা আর পোষানো যায়নি।

শীত কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেই না?

পুরো মাঘ মাসের পূর্বাভাস দিতে না-পারলেও আগামী এক সপ্তাহের আবহাওয়ার প্রাথমিক যে নির্ঘণ্ট মৌসম ভবন বানিয়েছে, তাতে কিছুটা আশার আলো। নির্ঘণ্ট মোতাবেক, এ সপ্তাহের মাঝামাঝি নাগাদ গোটা পূর্ব ভারতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানাচ্ছেন, মধ্যপ্রদেশে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তের জেরে তামাম পূর্ব ভারতে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। আগামী দু’দিনে তার মাত্রা বাড়বে। মঙ্গলবার রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে, ও বুধবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা। মাঘের কড়া শীত ফেরার আশ্বাস অবশ্য গোকুলবাবুর কাছে মেলেনি।

মেলেনি, কারণ উত্তর ভারতের যে কনকনে বাতাস কলকাতাকে বারো ডিগ্রির নীচে নামিয়ে দেয়, সেটাই তো এ বার বিলকুল গায়েব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE