ছেলেকে খুনের জন্য সুপারি দেওয়ায় অভিযুক্ত বাবা অশোক দ্বিবেদী। —নিজস্ব চিত্র।
আমহার্স্ট স্ট্রিটের সত্যকাম দাসের মতোই পরিণতি হল মোহনপুরের অনিমেষ দ্বিবেদীরও!
দু’জনেরই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন বাড়ির সকলে। দু’জনেই খুন হন। বাড়ির ভিতরেই সত্যকামকে পিঠে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। বছর আঠাশের অনিমেষের গলাকাটা দেহ পাওয়া গিয়েছিল গত মার্চ মাসে। জুনপুট কোস্টাল থানার বামুনিয়া পঞ্চায়েতের পূর্ব পুরুষোত্তমপুর গ্রামের ধানখেতে।
তফাত এটাই, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রক্তের দাগ’ গল্পের চরিত্র সত্যকামকে যে তার ‘বাবা’ ঊষাপতি দাসই খুন করেন, তা ধরে ফেলেছিলেন ব্যোমকেশ বক্সী। কিন্তু তা তিনি প্রকাশ্যে আনেননি। তবে, বাস্তবের অনিমেষকে এক লক্ষ টাকা ‘সুপারি’ দিয়ে খুন করানোর অভিযোগে সোমবার গ্রেফতার করা হল তাঁর বাবা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরের বৈতা গ্রামের বাসিন্দা অশোক দ্বিবেদীকে।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত অপরাধের কথা কবুল করে জানিয়েছেন, ছেলের আচরণে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। মঙ্গলবার অশোকবাবুকে কাঁথি আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ছেলেকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুনের অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দোষের কথা তিনি কবুল করেছেন। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকবাবুর কাঠ চেরাই কলের পৈতৃক ব্যবসা এবং একটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। তাঁর দুই ছেলে অমৃত এবং অনিমেষ। বাড়ির অংশীদার ওই দু’জনই। বখাটে আর মদ্যপ হিসেবে বরাবরই বদনাম ছিল অনিমেষের। শাসন করতে গেলে বাবাকে সে মারধর করত, এমনকী বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিত বলেও অভিযোগ। বাড়ির সকলে তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তার জন্য পাড়ায় অশোকবাবুদের বদনামও হচ্ছিল। গত ৬ মার্চ অনিমেষের দেহ যখন মেলে, তখন তা শনাক্ত হয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ চলতি মাসের গোড়ায় পূর্ব পুরুষোত্তমপুর থেকে জয়দেব মাইতি নামে এক যুবককে ওই খুনের অভিযোগে ধরে। তাকে জেরা করে ধরা হয় জুনবনির দেবদুলাল মাইতি নামে আরও এক জনকে। তাদের জেরা করেই পুলিশ তদন্তের কিনারা করে।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে কটকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অশোকবাবুর সঙ্গে দেবদুলালের পরিচয় হয়। ছোট ছেলেকে নিয়ে তাঁর সমস্যার কথা দেবদুলালকে জানান অশোকবাবু। কটকেই খুনের পরিকল্পনা করেন। গ্রামে ফিরে অনিমেষের সঙ্গে দেবদুলালের বন্ধুত্ব করিয়ে দেন। লুকিয়ে ছেলেকে খুনের জন্য দেবদুলালকে এক লক্ষ টাকাও দেন প্রৌঢ়। পরিকল্পনামাফিক গত ৬ মার্চ অনিমেষকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব পুরুষোত্তমপুরে মদ খেতে যায় দেবদুলাল। সঙ্গে নেয় ওই এলাকারই বাসিন্দা জয়দেবকে। সেখানকারই একটি ধানখেতে মদ খাওয়ার ফাঁকে সুযোগ বুঝে অনিমেষের গলা কেটে খুন করা হয়।
নিজে খুন হতে পারেন, এই আগাম আশঙ্কা থেকে তদন্তের জন্য ব্যোমকেশের কাছে গিয়েছিলেন গল্পের সত্যকাম। অনিমেষ অবশ্য তেমন কোনও আশঙ্কা করেনি। স্বামীই যে ছেলেকে খুন করিয়েছেন, তা
জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনিমেষের মা-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy