Advertisement
E-Paper

সবলা মেলাতেই মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টল কম

মোট ৪০টি স্টল। অথচ স্বনির্ভর মহিলা দলের স্টল মাত্র কয়েকটি। অগত্যা সবলা মেলা ফাঁকা থাকবে দেখে হস্তশিল্পীদের ডেকে এনে স্টল ভর্তি করতে হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরকে।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:০৩
বালুরঘাটে সবলা মেলা। ছবি: অমিত মোহান্ত

বালুরঘাটে সবলা মেলা। ছবি: অমিত মোহান্ত

মোট ৪০টি স্টল। অথচ স্বনির্ভর মহিলা দলের স্টল মাত্র কয়েকটি। অগত্যা সবলা মেলা ফাঁকা থাকবে দেখে হস্তশিল্পীদের ডেকে এনে স্টল ভর্তি করতে হয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরকে। অথচ সরকারি হিসাবই জানাচ্ছে, এ জেলায় গ্রামোন্নয়ন সেল অনুমোদিত দেড় হাজারের উপর মহিলাদের স্বনির্ভর দল রয়েছে।

শনিবার থেকে বালুরঘাটে শুরু হয়েছে স্বনির্ভর মহিলাদের সপ্তাহব্যাপী সবলা মেলা। কিন্তু মেলায় উপস্থিত মহিলা স্বনির্ভর দলগুলির অধিকাংশই সরকারি সহায়তার দাবি তুলেছে। বিভাগীয় দফতরের ঋণ চেয়েও মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। হস্তশিল্পীদের বক্তব্য, সরকার ফি বছর ক্লাব গুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে দান খয়রাত দিচ্ছে। অথচ বছরের পর বছর ঘুরেও স্বনির্ভর মহিলা দলগুলির এক লক্ষ টাকা করে ঋণ মিলছে না।

প্রকল্প আধিকারিক অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অগাস্টিন লেপচা বলেন, ‘‘পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্যই অনেকে ঋণ পান না। দশ জনের গোষ্ঠী করে ঋণের জন্য আবেদন করা উচিত। কিন্তু অনেকেই তা না করে আলাদা আলাদা ভাবে ঋণের জন্য আবেদন করেন।’’ তিনি জানান, এই সমস্যা মেটাতে জেলা জুড়েই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই গোষ্ঠীগুলিকে তাঁরা অনুমোদন দেওয়ার পরে ব্যাঙ্ক থেকেই তাঁদের টাকাপয়সা লেনদেন হওয়ার কথা। তাঁরা ব্যাঙ্কের সঙ্গেও এই ব্যাপারে কথা বলবেন।

তবে গোষ্ঠীর মহিলারা জানাচ্ছেন অন্য কথা। তপন ব্লকের স্বর্ণলতা স্বনির্ভর দলের কথাই ধরা যাক। আট বছর আগে ১১ জন মহি্লা নিয়ে দল তৈরি করে গোষ্ঠীর পথচলা শুরু হয়েছিল। সে সময় ঋণ পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়ে দলটি ৫০ হাজার টাকা ধারও পায়। ওই টাকায় কাপড়ের ব্যাগ, সফ্ট টয় সহ নানা ধরনের জিনিস তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন তাঁরা। দলটি এ বারই প্রথম সবলা মেলায় ডাক পেয়েছে। সহ দলনেত্রী অণিমা দাস বলেন, ‘‘ওই ঋণের টাকা শোধ করার পরে একাধিকবার ১১ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেও মেলনি।’’ তাঁদের সামান্য পুঁজি নিয়োগ করে ভালো সেলাই মেশিনপত্র কেনা যাচ্ছে না। হাট বাজারে তাদের হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি করে কোনও মতে চলছে বলে অণিমাদেবী জানিয়েছেন।

কুমারগঞ্জের মালতী স্বনির্ভর দলের সভানেত্রী মিনতি রায়ের আক্ষেপ, গত ২০০৪ সালে প্রথমবার ২০ হাজার টাকা এবং এরপর দ্বিতীয়বার ৩ লক্ষ টাকা পেয়ে তাঁরা ১০ জন এবং আরও শতাধিক উপদলের সদস্য মিলে ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী থেকে জুট, পুঁতি, জরির কাজ সহ ১০০ ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। সামনের মার্চে ঋণের কিস্তির টাকা শোধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘অথচ দফতরে ঘুরেও ঋণ মিলছে না।’’ সরকারের টাকা নেই বলে বিভাগীয় দফতর থেকে তাঁদের জানানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘ঋণ পেলে গোষ্ঠীর নিজস্ব ঘর ও পরিকাঠামো তৈরি করা যেত। সেলাই মেশিন ও যন্ত্রপাতি কিনে সামগ্রী তৈরিতে সমস্যা মিটত।’’

সবলা মেলার উদ্বোধনে জেলাশাসক কিন্তু দাবি করেছিলেন, জেলায় ১৫৭০টি স্বনির্ভর দলের প্রায় ৯০০০ সদস্য আত্মনির্ভরতা লাভ করেছেন। এই ধরনের মেলার মাধ্যমে তাঁদের তৈরি শিল্প সামগ্রী সম্পর্কে ধারণা ও বিপণনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। সরকারের স্বনিযুক্তি বিভাগ থেকে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

কিন্তু একই বেহাল পরিস্থিতি বংশীহারি ও গঙ্গারামপুরের বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর মহিলা দলেরও। যে কারণে এই মেলায় দেখা যাচ্ছে কিছু মহিলার ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করা পিঠেপুলি বা নানা ধরনের আচারের স্টল। কুশমণ্ডির মহিষবাথানের পাটের তৈরি পাপোস থেকে আসন ও কার্পেটের মতো ধোকরা শিল্পের সঙ্গে বাঁশ-বেতের নানা ধরনের ঘর সাজানোর জিনিসও মেলায় রয়েছে।

আবার কৃষি সমবায় সমিতির স্টলে জ্যাম জেলি থেকে আদিবাসী যুব স্বর্ণজয়ন্তী দলের তৈরি স্কুল ব্যাগ তৈরির স্টল এবং পতিরামের স্বামী বিবেকানন্দ যুব প্রকল্প দলের তৈরি ডালের নানা ধরনের বড়ি, পাঁপড়েও সবলা মেলার স্টল ভরেছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তাঁদেরও। আদিবাসী যুব স্বর্ণজয়ন্তী দলের চুরকা টুডু কিংবা পতিরামের স্বামী বিবেকানন্দ দলের উদ্যোক্তা ভক্ত সাহার অভিযোগ, সরকার থেকে তাঁরা কোনও ঋণ পাননি। নিজেদের উদ্যোগে তাঁরা সামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় যোগ দেন। তা ছাড়া স্কুলের সামনে এবং বাজারে দোকান দিয়ে সামগ্রী বিক্রির চেষ্টা করেন। মেলা চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

sabala mela anupratan mohanto
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy