Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মৃত আলু চাষিদের পরিবারের পাশে লকেটরা

তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন কী করব? কী ভাবে এদের মানুষ করব? সরকার কি আমাদের কথা কিছু ভাবছে? মহানগরীর আলো-ঝলমলে প্রেক্ষাগৃহে জনে জনে জিজ্ঞাসা করছিলেন জীর্ণ পোশাকের এক মহিলা। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে ভাষাহীন চোখে প্রেক্ষাগৃহের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেল সুমিত্রা ধাড়া নামে বাঁকুড়ার ওই মহিলাকে। তাঁর কোল আঁকড়ে থাকা ছ’বছরের ছেলেটির চোখেও আলোয় ধাঁধা লেগে যাওয়া দিশাহারা ভাব।

বিপন্ন আলু চাষিদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য একটি অনুষ্ঠানে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সোমবার কলামন্দিরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিপন্ন আলু চাষিদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য একটি অনুষ্ঠানে লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সোমবার কলামন্দিরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে এখন কী করব? কী ভাবে এদের মানুষ করব? সরকার কি আমাদের কথা কিছু ভাবছে?

মহানগরীর আলো-ঝলমলে প্রেক্ষাগৃহে জনে জনে জিজ্ঞাসা করছিলেন জীর্ণ পোশাকের এক মহিলা। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে ভাষাহীন চোখে প্রেক্ষাগৃহের চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেল সুমিত্রা ধাড়া নামে বাঁকুড়ার ওই মহিলাকে। তাঁর কোল আঁকড়ে থাকা ছ’বছরের ছেলেটির চোখেও আলোয় ধাঁধা লেগে যাওয়া দিশাহারা ভাব।

বাঁকুড়ার ময়নাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমিত্রার স্বামী অরুণ ধাড়া ছিলেন ভাগচাষি। মহাজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফসলের উপযুক্ত দাম পাননি। ৮৫ বস্তা আলু বিক্রি করে দিতে হয়েছিল মাত্র সাড়ে ন’হাজার টাকায়। দেনার দায়ে দিশাহারা অরুণবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয় মার্চে। গলায় দড়ি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। তার পরেই তেরো আর আট বছরের দুই মেয়ে এবং ছ’বছরের ছেলেকে নিয়ে কার্যত জলে পড়ে যান সুমিত্রাদেবী। মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও যে নিজেদের নয়!

মালদহের গাজলের কৃষক ফড়িং ঘোষও ৭০ হাজার টাকা ধার করে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফসল বিক্রি করে পান মোটে ২৬ হাজার টাকা। তাঁরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এবং দেনার দায়ে তিনিও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার আলুচাষি দিলীপ মণ্ডল, বর্ধমানের গলসি থানার আলুচাষি গণেশ সোরেন— সকলের কাহিনি একই।

এই রকম ৯-১০টি পরিবারের হাতে সোমবার কলামন্দিরে এক অনুষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হল। অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা অভিনেত্রী, বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। এ দিনের অনুষ্ঠানকে ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ বলা হলেও বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ-সহ লকেটের একাধিক দলীয় সতীর্থকে সেখানে দেখা গিয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘কয়েক মাস ধরেই বাংলার চাষিদের অবস্থা নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এর পিছনে রয়েছে পরিবর্তিত বাজার অর্থনীতি। সাংস্কৃতিক জগৎ এঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে, এটা খুবই ভাল ব্যাপার।’’ অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন লকেট। ছিলেন শিলাজিৎ, শমীক, সোমলতার মতো অনেকেই। তবে শিল্পীদের কেউই এ দিনের অনুষ্ঠানের জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি বলে উদ্যোক্তারা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE