বৈশাখের প্রথম ঝড়-বৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গে স্বস্তি নামাল ঠিকই। কিন্তু, একই সঙ্গে ঘটাল মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও। মৃত্যু হল এক শিশু-সহ দুই গ্রামবাসীর।
রবিবারের বারবেলায় নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে ঝড়-বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছে। টানা প্রায় দু’মাসের তীব্র গরমের হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন তিন জেলার বাসিন্দারা। তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা-১ ব্লকের সুলতানপুর গ্রামে ঘটে গেল সেই দুর্ঘটনা।
দমকা হাওয়ায় উনুনের আগুনের ফুলকি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে। পালাতে না পেরে পুড়ে মৃত্যু হয় কামরুজ্জামান শেখ (৪০) নামে এক ব্যক্তির। মারা গিয়েছে গোলাম মোস্তফা নামে বছর আটেকের এক শিশুও। আরও জনা কুড়ি গ্রামবাসী কমবেশি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুনে শতাধিক বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু চেষ্টা করেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি দমকলকর্মীরা—এমনটাই দাবি গ্রামের লোকজনের। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল লতিফ বলেন, ‘‘বাড়ির বাইরে উনুনে রান্না করার সময়ে ঝড়ের দাপটে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। একের পর এক বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র পুড়ে গিয়েছে।’’
এলাকার মানুষের অভিযোগ, আগুনের নেভানোর জন্য দমকলের একাধিক ইঞ্জিনের দরকার ছিল। কিন্তু আসে মাত্র একটি ইঞ্জিন। ফলে আগুন আয়ত্তে আসে অনেক দেরিতে। ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান বিডিও (ভগবানগোলা ১) লোপসান সিরিং। তিনি বলেন, ‘‘আগুনে পুড়ে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তাঁদের স্থানীয় কানাপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে দু’জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।’’ দমকলের কর্তারা অবশ্য আগুন নেভানোর গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
একই ভাবে ঝড়ের দাপটে উনুনের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সাগরদিঘির রামভদ্রপুর গ্রামেও ১৪টি বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টায় গ্রামের লোকজন আগুন আয়ত্তে আনে। এখানে অবশ্য হতাহতের কোনও খবর নেই। এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রজব আলি মল্লিক জানান, বহু গাছপালাও ভেঙে পড়েছে। অন্য দিকে, নদিয়ার চাপড়া, ধুবুলিয়া, দেবগ্রাম প্রভৃতি জায়গাতেও ঝড়ে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। বীরভূমেও আচমকা ঝড়ে বিভিন্ন ব্লকে গাছ উপড়ে গিয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু এলাকাতেও এ দিন শিলাবৃষ্টি হয়েছে।।