ছবি: সোহম গুহ।
প্রধানমন্ত্রী ৮ নভেম্বর যখন নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করছেন, তখন সমুদ্রে ছিল অনামিকা। ১১ তারিখ আড়াই টন মাছ নিয়ে ট্রলার অনামিকা যখন ফিরল, মোহনার পরিস্থিতিটা পুরো বদলে গিয়েছে। চিংড়ি, পমফ্রেট, সার্ডিন পড়ে রইল আড়তে। ক্রেতার দেখা নেই। ট্রলারের কর্মীদের পাওনা মেটাতে পারেননি মালিক।
অনামিকার কর্মী ভানু বর বলেন, ‘‘সাড়ে তিন হাজার টাকা পাই। কিন্তু সে সময় মালিকের কাছে টাকা ছিল না। ১৫ নভেম্বর ব্যাঙ্ক থেকে নোট বদলে মালিক দু’টি ২০০০ টাকার নোট দিতে চান। নিতে পারিনি। এই দু’হাজার টাকার নোট ভাঙাব কী করে?’’ আর এক কর্মী রামপদ সামন্তর দাবি, ‘‘আমরা মোহনাতেই থাকি। দিন কেটে যায়। কিন্তু বাড়িতে টাকা পাঠাতে না-পরলে ওরা খাবে কী। দিন-আনি, দিন খাই। আমরা দু’হাজার টাকা নোট ভাঙিয়ে কী কিনব?’’ ট্রলার মালিক শ্যামসুন্দর দাস জানান, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাজারে ক্রেতা ছিলেন। মোটামুটি বিক্রি হচ্ছিল মাছ। এখন ক্রেতাই নেই। তিনি বলেন, ‘‘যে আড়াই টন মাছ এল এ বার, তার দাম বাজারে প্রায় সওয়া ২ লাখ টাকা। কিন্তু দাম পেয়েছি দেড় লাখ মতো। মাছ পড়ে পড়ে পচছে।’’
বাঙালির পাতে মাছের জোগান দিতে কোনও দিন পিছিয়ে পড়েনি দিঘা। এখনও ভাঁড়ারে প্রচুর মাছ। কিন্তু ক্রেতা নেই পাইকারি বাজারে। নিলামও প্রায় বন্ধের মুখে। ট্রলার মালিকরা অনেকেই বলছেন, ‘‘সমুদ্রে থাকা ট্রলারগুলিও ফিরিয়ে নেব বলে ভাবছি। খরচে পোষাচ্ছে না যে!’’
বাতিল নোট আর পরের খুচরো-সমস্যায় জেরবার দিঘা মোহনার সামুদ্রিক মাছের পাইকারি বাজার। খুচরোর অভাবে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে বিকিকিনি। ক্রেতার অভাবে হু হু করে কমছে মাছের দাম। ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছেন দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দরবাবু। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, “নোট বাতিলের পর কয়েক দিনে মোহনার পাইকারি বাজারে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’’
দিঘার মোহনার পাইকারি বাজার থেকেই রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে মেঘালয়, অসম, সিকিম মুম্বাই, চেন্নাই ও হায়দরাবাদ এমনকী বিদেশেও মাছ রফতানি হয়। মৎস্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন মোহনা পাইকারি বাজারে ৫০০ টন সামুদ্রিক মাছ কেনাবেচা ও নিলাম হয়। ৩৫০ টন মাছ এ রাজ্য ও ভিন্রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে যায়। ১৫০ টন মাছ যায় বিদেশে। মৎস্যজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রণবকুমার করের দাবি কয়েক দিনে রফতানি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। দিঘা মোহনার পাইকারি মাছের আড়তদার অজিত হাজরা, ভুবন বেরা, দীনবন্ধু দে, নবকুমার পয়ড়্যা বিপর্যস্ত। তাঁদের দাবি, মাছ ধরতে ট্রলারের জ্বালানি, বরফ, কর্মীদের বেতন ও অন্য খরচ মিলিয়ে যা খরচ হয় তার সিকিভাগও উঠছে মাছ বিক্রি করে। ভুবন বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যে ক’টি ট্রলার সমুদ্রে রয়েছে, সেগুলিও ফিরিয়ে আনা হবে কিনা তা নিয়ে ভাবছি। মাছ ধরে কী হবে? বিক্রি তো হবে না। শুধু শুধু পচবে বাজারে।’’
দিঘা মোহনা পাইকারি মাছ বাজার
প্রতিদিনের ব্যবসা মোট রফতানি ৫০০ টন
(রাজ্যে ও ভিন্ রাজ্যে ৩৫০ টন এবং বিদেশে ১৫০ টন
নোট বাতিলের জেরে কয়েকদিনে রফতানি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে।
প্রণবকুমার কর, চেয়ারম্যান, দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy