Advertisement
E-Paper

মালিকের অতি লোভে এই হাল, ক্ষিপ্ত ধীবরেরা

মালিকের মুনাফা লোটার তাগিদ আর বুলবুলের জোড়া ফলার খোঁচায় মৎস্যজীবীদের কয়েক জন ডুবলেন নদীতে। কেউ কেউ নিখোঁজ।

শান্তনু ঘোষ ও দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৫
মৌসুনি নদীর থেকে উদ্ধার ন’জন মৎস্যজীবী। ছবি: রণজিৎ নন্দী

মৌসুনি নদীর থেকে উদ্ধার ন’জন মৎস্যজীবী। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়েই তাঁরা বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ট্রলারচালক বারে বারেই জানিয়ে দেন, মালিকের অনুমতি না-মিললে ফেরা ‌যাবে না। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর দাপটের মধ্যে কিছু মৎস্যজীবীকে মালিকদের এই লোভেরই বলি হতে হয়েছে বলে ধীবরকুলের অভিযোগ!

মালিকের মুনাফা লোটার তাগিদ আর বুলবুলের জোড়া ফলার খোঁচায় মৎস্যজীবীদের কয়েক জন ডুবলেন নদীতে। কেউ কেউ নিখোঁজ। যাঁরা কোনও মতে সাঁতরে নদীর পাড়ে উঠতে পেরেছেন, তাঁরা বলছেন, ‘‘মাছ ধরা ছেড়ে এ বার দিনমজুরের কাজ করব।’’ মালিকদের ‘অতি লোভে’ তাঁদের স্বজনদের এই দুর্দশায় ক্ষোভে ফুঁসছেন মৎস্যজীবীরা।

বুলবুলের দাপটে নামখানার পাতিবুনিয়ার চিনাই নদীতে নোঙর করা ট্রলার ‘চন্দ্রাণী’ উল্টে গিয়েছিল। প্রথমে একটি দেহ উদ্ধার হয়। বাকি আট জনের খোঁজে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় তল্লাশি। ক্ষোভে ফেটে পড়ে এক ট্রলার-মালিকের আত্মীয়ের উপরে চড়াও হন নিখোঁজদের পরিজন। তাঁদের ক্ষোভ থেকে রেহাই পায়নি পুলিশও। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়। এ দিন ওই নদী থেকে কাকদ্বীপের মাইতির চক গ্রামের বাসিন্দা মুজিবর রহমান ও কুলপির নিশ্চিন্তপুরের অসিত ভুঁইয়ার দেহ উদ্ধার হয়। ট্রলারটি তোলা যায়নি।

‘চন্দ্রাণী’ ছাড়াও ‘কমলা’, ‘সম্প্রীতি’, ‘সপ্তর্ষি নারায়ণের’ মতো আরও কয়েকটি ট্রলার ঝড়ের মুখে পড়েছিল। তবে সেই সব ট্রলারের সব ধীবরই সাঁতরে কোনও না-কোনও নদীর পাড়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, দুর্যোগ আসছে জেনেও নদীতে নোঙর করে ট্রলারে কেন বসে ছিলেন মৎস্যজীবীরা? রাগে ফেটে পড়লেন ‘সম্প্রীতি’র মৎস্যজীবী উত্তম গুছাইত। বললেন, ‘‘পাছে আমরা পালিয়ে যাই, তাই মালিকের নির্দেশেই পাড় থেকে দূরে নোঙর করা হয়েছিল। এ ভাবে আটকে রাখা হয় সব ট্রলারকেই।’’

মৌসুনি নদীতে আটকে ছিল উত্তমদের ট্রলার। দুর্গানবমীতে তাঁরা ন’জন পাড়ি দিয়েছিলেন সাগরে। উদ্ধারের পরে নামখানার বিডিও অফিসে বসে উত্তমের সঙ্গী মদন পাত্র বললেন, ‘‘ওয়াকিটকিতে বড় ঝড়ের কথা শুনেই মনে ভয় ধরেছিল। চালক বলেছিলেন, ‘এখন তো সবে দু’নম্বর সিগন্যাল’।’’ মালিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বললেন না কেন? ‘‘আমরা তো দু’-তিন দালালের হাতবদল হয়ে কাজে আসি। তাই মালিকের নামটুকু শুধু জানতে পারি,’’ বললেন ‘সম্প্রীতি’-তে থাকা মৎস্যজীবী শ্যামল দাস।

ইলিশের মরসুম না-হলেও কয়েক মাস ধরে সাগরে ভেসে লালপাতা, বোমলা, রুলি, লইট্যা মাছ ধরেন মৎস্যজীবীরা। তা থেকে তৈরি হয় শুঁটকি মাছ। উত্তম জানান, সেই ব্যবসায় লোকসান করতে চান না বলেই মালিকেরা সহজে ট্রলার ফেরাতে রাজি হন না। ওয়াকিটকি মারফত বুলবুলের ধেয়ে আসার কথা শুনে বৃহস্পতিবার চিনাই নদীতে ফিরে এসেছিল চন্দ্রাণী, কমলা, সপ্তর্ষি নারায়ণের মতো কিছু ট্রলার। সপ্তর্ষি নারায়ণের মৎস্যজীবী সোমনাথ দাস বলেন, ‘‘৩০-৪০ ফুট উচ্চতার ঢেউ এসে ট্রলারের গায়ে ধাক্কা মারছিল। হঠাৎ ওয়াকিটকিতে খবর পেলাম, চন্দ্রাণী ট্রলারটি ডুবে গিয়েছে।’’

চন্দ্রাণীর চালক সীতারাম দাস বলেন, ‘‘ঘন অন্ধকারে ট্রলার যখন ডুবতে শুরু করল, কে কোথায় চলে গেল, জানি না।’’ ‘সম্প্রীতি’-কে বাঁ দিকে হেলতে দেখেই জলে ঝাঁপ দেন শ্যামল-উত্তমেরা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মৌসুনি নদী সাঁতরে ন’জন মৎস্যজীবী উঠেছিলেন হুজ্জুতঘাটে। সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করেন নামখানার বিডিও, পঞ্চায়ের সমিতির সদস্যেরা।

ঝড়ের রাতের ‘মৃত্যুভয়’ কাটিয়ে সকলেই এখন ঘরে ফেরার অপেক্ষায়।

Cyclone Bulbul Fishermen Trawler
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy