Advertisement
২৪ মে ২০২৪

মৎস্যজীবীকে হেনস্থা চলবে না, মুখ্যমন্ত্রী

মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের উপরে বন দফতরের নির্যাতন-নিপীড়নের কথা বার বার শুনেছি। আমার মনে হয়, এই অভিযোগ সঠিক। আগের সরকার ওদের জন্য কিছুই করেনি।

আগমন: গোসাবার সভায় এলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

আগমন: গোসাবার সভায় এলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
গোসাবা  শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

বন দফতরের হাতে মৎস্যজীবীদের হেনস্থা হতে হয় বলে বহু দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। তা বন্ধ করতে এ বার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার গোসাবার হ্যামিলটনের ময়দানের সভায় মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন গোসাবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকরকে। গোসাবার বিডিও তাপস কুণ্ডুর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে মমতা বলেন, ‘‘বিডিওর কাছে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়েছিল। কিন্তু বিডিও তাতে গুরুত্ব দেননি। যা কাম্য নয়।’’ এরপরেই জেলাশাসককে বন দফতরের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের উপরে বন দফতরের নির্যাতন-নিপীড়নের কথা বার বার শুনেছি। আমার মনে হয়, এই অভিযোগ সঠিক। আগের সরকার ওদের জন্য কিছুই করেনি। এগুলি এ বার বন্ধ করতে হবে। রত্নাকর, তুমি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নাও।’’

সুন্দরবনের বেশির ভাগ মানুষই মাছ ধরে সংসার চালান। নদী, খাঁড়িতে যেতে হয় তাঁদের। বন দফতর কোর এলাকায় এই মৎস্যজীবীদের মাছ শিকারে বাধা দেয়। যদিও বা পেটের টানে লুকিয়ে মৎস্যজীবীরা যান, ধরা পড়লে মোটা টাকা জরিমানা করা হয় বলে অভিযোগ। সে কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রীও। জানান, মৎস্যজীবীদের নৌকো, জাল, মাছ কেড়ে নেওয়া হয় বলে তিনিও শুনেছেন।

সম্প্রতি ঝড়খালির বাসিন্দা শঙ্কর মণ্ডল, বাসন্তীর আমঝাড়ার গোষ্ঠ খাঁ বাঘমারা চামটায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সে সময়ে বন দফতর তাঁদের গালিগালাজ করে জাল কেড়ে নেয়। বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট, মাছ ধরার শংসাপত্র) কেড়ে নেয়। এই শংসাপত্র ফেরত পেতে গিয়ে তাঁদের নানা ভাবে হয়রান করা হয় বলেও অভিযোগ।

এ সব চলতে দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাকে বলেন, ‘‘বন দফতর বন দফতরের মতো কাজ করবে। গরিব মৎস্যজীবীরা নিজেদের কাজ করবেন। বাঘ-কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে অনেক কষ্টে ওঁরা বেঁচে থাকেন। তাঁদের কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে।’’ মন্টুরামবাবুকে বিষয়টির উপরে নজর রাখার দায়িত্বও দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘মৎস্যজীবীরা জল-জঙ্গলের উপরে নির্ভর করেই বেঁচে থাকেন। তাতেও যদি বাধা দেওয়া হয়, তা হলে তাঁদের বেঁচে থাকার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে খুশি মৎস্যজীবীরা। সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুকান্ত সরকার বলেন, ‘‘এত দিনে সুন্দরবনের মানুষের জল-জঙ্গলের অধিকারের দাবি পূরণ হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে গরিব মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে জন্য ওঁকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’

বন দফতরের যুক্তি, যা করা হয় আইন মেনেই। জঙ্গলের কোর এলাকায় মাছ ধরতে ঢুকলে তা বন্যপ্রাণের জন্য নিরাপদ নয়। সে জন্যই আইন। সেটাই মেনে চলা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fishermen Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE