Advertisement
E-Paper

খানাকুলে বন্যায় মাছচাষেই ক্ষতি ১৬ কোটি

প্রচুর সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও বন্যা মোকাবিলা নিয়ে সরকারি উদাসীনতায় খানাকুলের দু’টি ব্লকে তাঁরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুললেন মাছচাষিরা।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩০
ডুবেছে চাষ। মাথায় হাত চাষির।—নিজস্ব চিত্র।

ডুবেছে চাষ। মাথায় হাত চাষির।—নিজস্ব চিত্র।

প্রচুর সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও বন্যা মোকাবিলা নিয়ে সরকারি উদাসীনতায় খানাকুলের দু’টি ব্লকে তাঁরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছ চাষ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুললেন মাছচাষিরা।

খানাকুল ১ ও ২ নম্বর ব্লকে প্রায় ১৬০০ হেক্টর পুকুর ছাড়াও খাল-বিল-নদী-নালা সহ অসংখ্য জলাশয় রয়েছে। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরেই বন্যায় পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে যায়। সরকারি হিসাবেই এ বছর বন্যায় ওই দুই ব্লকে মাছচাষে ক্ষতির অঙ্ক মোট ১৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। দুই ব্লকের মাছচাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি, বন্যাকে কেন্দ্র করে মাছচাষিদের জন্য সরকার বিশেষ পরিকল্পনা করুক। খানাকুল ২ ব্লকের মাড়োখানার মাছচাষি নিতাই সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, বন্যার ঠিক আগে সরকার ন্যায্যমূল্যে মাছ কিনে নিক। নইলে ওই সময় এখানে জলের দরে বিক্রি করতে হয়। তা ছাড়া বন্যার পর অনুদান-সহ ঋণের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি খরচে পুকুর সংস্কার।’’এ বিষয়ে হুগলি জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা পার্থ কুণ্ডু বলেন, ‘‘মাছচাষিদের দাবিগুলি নিয়ে রাজ্য সরকার বিশেষ চিন্তাভাবনা করছে। সেই উদ্দেশ্যে তিন দফতরকে (মত্‌স্য-কৃষি এবং প্রাণিসম্পদ) যৌথভাবে ব্লক ধরে ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ অগস্ট এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়ার কথা।’’

আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার বন্যায় খানাকুল ১ ব্লকের ১৩ টি পঞ্চায়েতের ১৯২৫টি পুকুর সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ায় ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ৭ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। খানাকুল ২ ব্লকে ৮৯২ হেক্টর পুকুর এলাকার একটাও আস্ত নেই। সেখানে ক্ষতির অঙ্ক ৯ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা।

খানাকুলের দুটি ব্লক এলাকায় অন্তত ৬০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার আছেন বলে দুই পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে। এঁদের অনেকে জোটবদ্ধ বা গোষ্ঠী করে। কেউ আবার একক ভাবে মাছ চাষ করেন। খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুরের এক মাছচাষি সুফল বায়েনের ক্ষোভ, ‘‘বন্যার কারণেই মাছ চাষে উত্‌সাহ হারিয়ে ফেলছেন চাষিরা। লোকসানের তুলনায় সরকারিভাবে যে সব সাহায্য মেলে তা যথেষ্ট নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু মিনি কিট আর খাবার পাওয়া যায়।’’

খানাকুল ২ ব্লকের নতিবপুরের নির্মল মাইতি জানান, প্রতি বছরই মাছচাষিরা পুকুর ডুববে না ভেবে মাছ রেখে দেন। অথচ বন্যা হলেই সর্বস্বান্ত হতে হয়। এ ছাড়া পুকুর না ডুবলেও যদি বন্যার জল ঢোকে তা হলেও ক্ষতি হয়। কারণ বোয়াল জাতীয় মাছ ঢুকে গিয়ে অন্য মাছ খেয়ে সাফ করে দেয়। এক বিঘা মাপের পুকুরে লক্ষাধিক টাকার মাছ থাকে। এমন অবস্থায় তার পুরোটাই জলে যায় তো বটেই, উল্টে নতুন করে পুকুর শোধন করে সংস্কার করতে আরও খরচ হয়।

এমনিতে প্রতি চার মাস অন্তর মাছ তুলে বিক্রি করেন চাষিরা। বন্যা হলে পরবর্তী চার মাস মাছ চাষ বন্ধ থাকে। সেই সময়ে চুন ইত্যাদি দিয়ে পুকুর সংস্কার করে তবেই নতুন মাছ চাষ করা যায়। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, বন্যা পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের যাতে মাছের চারা, মাছের খাবার, পুকুর পরিশোধনের জন্য চুন, জাল-হাঁড়ি ইত্যাদি উপকরণ দেওয়া যায় রাজ্য দফতরে সেই সুপারিশ করা হয়েছে।

piyush nandi khanakul flood 16 crore damage 16 crore rupees khanakul fishery fishery damage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy