এই সেই হোম। বুধবার সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
রাজ্যের বিভিন্ন হোমের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অনিয়মের নালিশ মাঝেমধ্যেই ওঠে। সেই তালিকায় জায়গা করে নিল কৃষ্ণনগরের একটি হোম।
মঙ্গলবার রাতে দরজার তালা ভেঙে সেখানকার বিচারাধীন পাঁচ আবাসিক চম্পট দেয়। বুধবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পলাতকদের কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির নতুনপাড়া এলাকায় বিচারাধীন নাবালকদের থাকার জন্য সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হোমটি তৈরি করে করিমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই হোমে ২৫ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ছিল ১৪ জন আবাসিক। তার মধ্যে ১০ জন ছিল বিচারাধীন। বাকিদের রাখা হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এই বিচারাধীনদের পাঁচ জন এ দিন চম্পট দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পলাতক আবাসিকদের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশের বাসিন্দা। একজন চুরির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে ছিল ওই হোমে। আর একজন ধর্ষণের অভিযোগে ও একজন অপহরণের ঘটনায় ওই হোমে ছিল।
ঘটনার পরপরই বুধবার সকালে হোমে আসেন আইসিডিএস-এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলাশাসককে রিপোর্টও দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে হোম কর্তৃপক্ষকে শো-কজ করে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে না? জেলাশাসক পিবি সালিম বলেন, ‘’২৪ ঘন্টার হোম কর্তৃপক্ষকে শো-কজের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। শো-কজের উত্তর মেলার পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাতে হোমের মূল ফটকে তালা মারা ছিল। বাইরে হোম চত্বরে দু’জন নৈশপ্রহরী নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ভোর চারটে নাগাদ তালা ভাঙার বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বিষয়টি হোম কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দুই নিরাপত্তাকর্মীর চোখে ধুলো দিয়ে কী ভাবে ওই পাঁচ আবাসিক পালিয়ে গেল? তাহলে কী ওই রাতে নিরাপত্তা ঢিলেঢালা ছিল? জেলা প্রাশাসনের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, তিনটি তালা ভাঙা সহজ নয়। তালা ভাঙতে ওই আবাসিকদের দীর্ঘ সময় লেগেছিল। লোহার গ্রিলের সঙ্গে লাগানো এই তালা ভাঙার সময় বিকট আওয়াজ হওয়ার কথা। তাহলে কেন হোমের অন্যান্য আবাসিকরা বিষয়টি টের পেল না? কেনই বা কর্তব্যরত নৈশপ্রহরী কোনও সাড়াশব্দ পেলেন না? যে গেটের তালা ভাঙা হয়েছে, তার পাশেই রয়েছে নৈশপ্রহরীদের বিশ্রামের জায়গা। তাহলে কেন তাঁরা বিষয়টি জানতে পারলেন না? এই প্রশ্ন জেলা প্রশাসনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
নৈশপ্রহরীরা অবশ্য সাফাই গাইতে ব্যস্ত। দুই নৈশপ্রহরীর মধ্যে অন্যতম অমিয়শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘আমি রাতে ছাদে উঠে চারদিকে নজর রাখছিলাম। তাই নীচের কোনও শব্দ কানে আসেনি। পরে নেমে এসে দেখি দরজা খোলা। তালা ভাঙা।’’ অন্য নৈশ্যপ্রহরী তদন্তের সময় জানিয়েছেন, শরীর খারাপ থাকায় তিনি ওই রাতে ঘুমিয়েছিলেন।
হোমের পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোক সরকারের অবশ্য দাবি, ‘‘নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনও গলতি ছিল না। আবাসিকরা যাতে কোনওভাবেই পালাতে না পারে তার জন্য আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। কিন্তু তারপরও কী ভাবে এমনটা হল বুঝতে পারছি না।’’
তবে মাস দু’য়েক আগেও এক বাংলাদেশি আবাসিক এই হোম থেকে চম্পট দেয়। সে যাত্রায় অবশ্য এলাকার লোকজনই তাকে পাশের গ্রাম থেকে খুঁজে এনেছিলেন। হোম থেকে বিচারাধীন আবাসিক পালানোর এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নদিয়া জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির সভাপতি রিনা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পলাতক এই নাবালকরা ধরা না পড়লে তাঁরা ভবিষ্যতে আরও বড় কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy