বন্ধ কারখানার পড়ে থাকা জমি শিল্পের কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য সরকার। কী ভাবে সম্ভব, তার হদিস পেতে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ন’জন মন্ত্রীর নতুন গোষ্ঠীটি খুব শিগগিরই প্রথম বৈঠকে বসবে বলে শুক্রবার নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ কারখানার সঠিক হিসাব এখনও সরকারের কাছে খুব স্পষ্ট নয়। এক মন্ত্রী জানান, মূলত বন্ধ কারখানার ফাঁকা জমির পরিমাণ জানতে বাম আমলে এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছিল। নতুন জমানাতেও তারা কাজ চালিয়েছে। তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে বন্ধ কল-কারখানার (পাঁচশোর বেশি কর্মী ছিলেন) সংখ্যা প্রায় ৫০০। বন্ধ চা-বাগান ও চটকলও এর মধ্যে রয়েছে।
কিন্তু বন্ধ সংস্থার পড়ে থাকা জমির বহর নিয়ে সরকারের মধ্যেই সংশয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রীর দাবি, পরিমাণটা প্রায় ১৫ হাজার একর। অন্য দিকে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার মতে, প্রাথমিক ভাবে তা প্রায় ৪৩ হাজার একর।
শিল্প গড়তে ওই সব জমিকেই এখন পাখির চোখ করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে জমির অভাব রয়েছে। যেটুকু আছে, তা-ও মূলত কলকাতার দূরবর্তী বিভিন্ন জেলায়। অথচ পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার সুবাদে নতুন শিল্প গঠনের ক্ষেত্রে কলকাতা ও আশপাশেই জমির চাহিদা বেশি। তবে বন্ধ কারখানাগুলো মূলত কলকাতা আশপাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই সেখানকার জমি পাওয়া গেলে সুবিধা হবে বলে সরকার আশাবাদী।
ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে নবান্নের এক কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি হল, শিল্পের জন্য প্রশাসন কোনও জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না। তবে বিভিন্ন শিল্পপার্ক ও জমি ব্যাঙ্কে মজুত জমি বেসরকারি শিল্পের কাজে লাগানো যেতেই পারে। যদিও পরিকাঠামো ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে অনেক সংস্থাই তাতে বিশেষ আগ্রহী নয়। উপরন্তু বেসরকারি শিল্পোদ্যোগী নিজে জমি কিনতে গেলেও সমস্যা। বহু মালিকের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে, যা কিনা অনেকের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে শিল্প-জমি সংস্থানের বিকল্প উদ্যোগ। আর সেই লক্ষ্যেই বন্ধ কারখানার জমির খোঁজ। এ জন্য নবান্নের গড়া মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার এবং আইন ও বিচারমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কী কাজ হবে তাঁদের?
অধিকাংশ মন্ত্রীর এখনও বিশেষ স্পষ্ট ধারণা নেই। তাঁরা বলেছেন, বৈঠকেই এ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে বন্ধ কারখানার মালিকদের ডেকে সর্বশেষ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা হবে। জানতে হবে, কারখানায় কত জন কাজ করতেন, জমিতে কী শর্ত প্রযোজ্য, ইত্যাদি। কারখানা ‘রুগ্ণ’ হলে বিশদ তথ্য জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। ‘‘তালিকায় অনেক সরকারি সংস্থা রয়েছে। তাদের ফাঁকা জমি পেতে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে বেশি জমি রয়েছে বন্ধ চটকল ও চা-বাগানের হাতে।’’— মন্তব্য এক মন্ত্রীর। নবান্নের এক কর্তা জানান, প্রথমে সংশ্লিষ্ট মালিককে বন্ধ কারখানা খোলার পরামর্শ দেওয়া হবে। সরকার তাতে সাহায্যও করবে। তিনি রাজি না-হলে অন্য সংস্থাকে বলা হবে ওই জমিতে শিল্প গড়তে।
প্রশাসনের একাংশে অবশ্য কিছু সংশয়ও দানা বেঁধেছে। এই মহলের বক্তব্য: অনেক বন্ধ কারখানায় খাতায়-কলমে ফাঁকা জমি থাকলেও বাস্তবে তা বেদখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও দোকান, কোথাও শপিং মল, কোথাও বা আবাসন গজিয়ে উঠেছে। অনেক কারখানা ঘিরে রয়েছে আইনি জটিলতা। কিছু বেসরকারি সংস্থার মালিকানা নিয়েও বিস্তর ধন্দ।
এ সব কাটিয়ে কত দিনে কতটা ফাঁকা জমি হাতে আসবে, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে নবান্নের অন্দরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy