Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফরেন্সিক গেরোয় ঝুলছে দগ্ধ তরুণীর মৃত্যু মামলা

আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিলেন ইটাহারের কলেজপডুয়া তরুণী। কিন্তু বেঁচে গিয়েছিল মোবাইলটা। মেয়ের মৃত্যুর পরে সেই মোবাইল ঘাঁটতে গিয়েই এই অস্বাভাবিক মৃত্যুরহস্যের পর্দা কিছুটা উঠে গিয়েছিল বাবার সামনে। অভিযোগ, তিন যুবকের ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই তরুণী।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১০
Share: Save:

আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিলেন ইটাহারের কলেজপডুয়া তরুণী। কিন্তু বেঁচে গিয়েছিল মোবাইলটা। মেয়ের মৃত্যুর পরে সেই মোবাইল ঘাঁটতে গিয়েই এই অস্বাভাবিক মৃত্যুরহস্যের পর্দা কিছুটা উঠে গিয়েছিল বাবার সামনে। অভিযোগ, তিন যুবকের ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই তরুণী।

২০১৪ সালের এপ্রিলে ওই ঘটনার পরে তরুণীর বাবার বয়ান এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করেছিল তারা। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সেটি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। ঘটনার পরে দু’বছর কেটে গেলেও সেই ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মামলার বিচার শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই ফরেন্সিক রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’

ওই রিপোর্টের পথ চেয়ে রয়েছে তরুণীর পরিবারও। দু’বছর ধরে তাদের লড়াইয়ে পাশে আছে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু শুধু ফরেন্সিক রিপোর্টের এই গেরো কী ভাবে কাটবে, বুঝতে পারছেন না কেউ। ওই তরুণীর বাবা বলছেন, ‘‘আমার মেয়ে আর ফিরবে না। কিন্তু এমন অপরাধ যাতে আর কোনও মেয়ের সঙ্গে না-হয়, তার জন্যই লড়ে যাব।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রীতম কুণ্ডু নামে যুবক যে তরুণীকে উত্ত্যক্ত করত, তার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। প্রীতমের দু’টি মোবাইল থেকে ৭০০টি মেসেজ পাঠানো হয়েছিল ওই তরুণীকে। গায়ে আগুন দেওয়ার আগের মুহূর্তেও প্রীতমের সঙ্গে কথা বলেন তরুণী। এত প্রমাণের পরেও কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক বিভাগের কর্তারা রিপোর্ট দিতে দেরি করছেন কেন, সেটা তদন্তকারী অফিসারদের বোধগম্য হচ্ছে না।

পুলিশের অনেকে অবশ্য বলছেন, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক থেকে সাইবার সংক্রান্ত রিপোর্ট পেতে কালঘাম ছোটার ঘটনা মোটেই নতুন নয়। এমন আরও অনেক মামলাই রিপোর্টের অভাবে ঝুলে আছে। যেমন ইদানীং কলকাতার সেক্টর ফাইভে বসে জালিয়াতি চক্র চালাচ্ছিল একটি সংস্থা। তারা এখানে বসে বেলজিয়াম, জার্মানি, কানাডা-সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ঠকিয়ে কয়েকশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জার্মান পুলিশের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চক্রটির চাঁইদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে হার্ড ডিস্ক-সহ বহু বৈদ্যুতিন সামগ্রী।

সিআইডি-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই মামলার আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি রয়েছে। তাই দ্রুত ফরেন্সিক রিপোর্ট চেয়ে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক বিভাগকে চিঠি দিয়েছিলেন। তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি বলে আক্ষেপ করছেন সিআইডি-র কর্তারা। ২০১৫ সালে লেক টাউনে এক তরুণীর অশ্লীল ছবি তুলে ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় রাজ্যের এক প্রভাবশালী পুলিশকর্তা হস্তক্ষেপ করার পরেও ফরেন্সিক রিপোর্ট পেতে কয়েক মাস সময় লেগে গিয়েছিল। কিছুটা ব্যতিক্রম নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা। সেই ফুটেজের ফরেন্সিক রিপোর্ট মোটামুটি দ্রুতই পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, খাস কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ফুটেজটি কেন্দ্রীয় ফরেন্সিকে গিয়েছিল বলেই তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন উঠছে, এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে রিপোর্ট পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? হাইকোর্টের মতো সংস্থা থেকে নির্দেশ না-গেলে কি ফরেন্সিক পরীক্ষায় এ-রকম গড়িমসি চলবে?

কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদের কাছে এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। রাজ্যের পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে সাইবার ফরেন্সিক কাজের জন্য যথেষ্ট কর্মী নেই। তাই রিপোর্ট পাঠাতে এত দেরি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Forensic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE