Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ভুল হলে ক্ষমা চাইছি: অনুব্রত

ভোল বদল অনুব্রতর! পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালানো ও পুলিশ-প্রশাসনের উপরে বোমা মারার পরামর্শ দিতে শুনেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই মন্তব্য এবং তার ‘জের’ নিয়ে দীর্ঘদিন রাজ্য জুড়ে সমালোচনা হয়েছে, হয়েছে কোর্ট-কাছারিও। সোমবার সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েত এলাকার দেশালপুরের সভায় সেই অনুব্রতকেই বলতে শোনা গেল, “আমাদের দলের কেউ কোনও ভুল করে থাকলে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলেও হাতজোড় করে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”

পায়ে চোট। দেহরক্ষীর কাঁধে ভর দিয়ে সিউড়িতে বক্তৃতা অনুব্রতর। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

পায়ে চোট। দেহরক্ষীর কাঁধে ভর দিয়ে সিউড়িতে বক্তৃতা অনুব্রতর। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৪
Share: Save:

ভোল বদল অনুব্রতর!

পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালানো ও পুলিশ-প্রশাসনের উপরে বোমা মারার পরামর্শ দিতে শুনেছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই মন্তব্য এবং তার ‘জের’ নিয়ে দীর্ঘদিন রাজ্য জুড়ে সমালোচনা হয়েছে, হয়েছে কোর্ট-কাছারিও। সোমবার সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া পঞ্চায়েত এলাকার দেশালপুরের সভায় সেই অনুব্রতকেই বলতে শোনা গেল, “আমাদের দলের কেউ কোনও ভুল করে থাকলে আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা হলেও হাতজোড় করে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে অনুব্রত মণ্ডলের ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই পাড়ুইয়ে খুন হয়ে গিয়েছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল পরিবারের বৃদ্ধ সাগর ঘোষ। যে ঘটনায় অভিযুক্তের তালিকায় এক নম্বরে অনুুব্রতরই নাম রয়েছে। খয়রাশোলে ব্লক তৃণমূল নেতা অশোক ঘোষ হত্যাতেও অনুব্রত ঘনিষ্ঠ অশোক মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত হয়েছেন। লোকসভা ভোটের পরে ইলামবাজারের কানুর গ্রামে বিজেপি কর্মী খুনেও প্রধান অভিযুক্ত অনুব্রত অনুগামী জাফারুল ইসলাম। এ দিন তবে কোন ভুলের জন্য অনুব্রত ক্ষমা চাইছেন, প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

অনেকেরই মতে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাপে পড়ে এখন ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টা করছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের দাবি, গোটা রাজ্যের মতো বীরভূমেও তৃণমূলের অনেকে (সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় ঘোষ যাঁদের অন্যতম) বিজেপির হাত ধরছেন। সম্প্রতি অনুব্রতর খাসতালুক বোলপুরে বিজেপির সভায় ভিড় দেখেও কপালে ভাঁজ পড়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। রাহুল সিংহের মন্তব্য, “মানুষ ওদের হাত ছাড়ছেন। সেটা বুঝতে পেরেই অনুব্রতবাবু এই কৌশল নিয়েছেন বলে মনে হয়। তবে উনি না আঁচালে বিশ্বাস নেই। এর পরে কী হয়, দেখতে হবে।”

এ দিনের মন্তব্যের পরে ভবিষ্যতে অনুব্রত কী করেন, তা দেখতে চান সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও। তাঁর টিপ্পনী, “এটা ভূতের মুখে রাম নাম।” মঞ্চে জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী (সাগর ঘোষ মামলায় আর এক অভিযুক্ত), দলের সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলামদের সামনে এ দিন অনুব্রতর সতর্কবার্তা, “সংযত থাকুন। আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না। মানুষই আমাদের ক্ষমতায় এনেছেন। তাঁদের সম্মান দিন।” অনুব্রত অবশ্য শুধু সতর্কবার্তাতেই থামেননি। জনতার উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, “ভুল করলে দলীয় কর্মীদেরও ছাড় নেই। আমাদের দলের কোনও কর্মী যদি আপনাদের অসম্মান করে থাকেন, তা হলে আমাকে জানান। আমি ব্যবস্থা নেব।” বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলছেন, “এ সবই নাটক! জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও যে হারে বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন, তাতে ভয় পেয়েই এখন অনুব্রত দলীয় কর্মীদের সংযত হতে বলছেন।”

বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর ডাক

দুই কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মাথায় এলাকায় গিয়ে বাড়ির মহিলাদের বঁটি নিয়ে রুখে দাঁড়াতে বললেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত কোচবিহারের সুটকাবাড়িতে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হন চার জন। এঁদের মধ্যে দু’জন গুলিবিদ্ধ। সোমবার সকালে রবীন্দ্রনাথবাবু এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীদের বলেন, “ভয় পাবেন না। বাড়িতে বঁটি নেই? বঁটি নিয়ে বার হয়ে রুখে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন, মা দুর্গাও অস্ত্র হাতে অসুর নিধন করেছিলেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “ওঁর বক্তব্য প্ররোচনামূলক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anubrata mondal siuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE