Advertisement
০৮ মে ২০২৪

শুকোচ্ছে গঙ্গা, জলচুক্তির দিকেই আঙুল

রাতারাতি জল হারিয়েছিল গঙ্গা, বহরমপুরের ফরাসডাঙায় রবিবার সকালে নদীর বুকে বিস্তৃত চর দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, এ বার চর পড়তে দেখল হাওড়ার বালি।

জলহারা গঙ্গা। সোমবার দক্ষিণেশ্বরে সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জলহারা গঙ্গা। সোমবার দক্ষিণেশ্বরে সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

রাতারাতি জল হারিয়েছিল গঙ্গা, বহরমপুরের ফরাসডাঙায় রবিবার সকালে নদীর বুকে বিস্তৃত চর দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি, এ বার চর পড়তে দেখল হাওড়ার বালি।

গঙ্গার এই জল-হারা দশার জন্য একুশ বছর আগে, ভারত-বাংলাদেশ জলচুক্তির শর্তের দিকেই আঙুল তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি সূত্রও জানাচ্ছে, ওই জলচুক্তি মানতে গিয়েই ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে নেমে গিয়েছে জলস্তর। আর তার জেরেই, গঙ্গার বুকে কোথাও জেগেছে বিস্তৃত চর, কোথাও বা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ফেরি চলাচল। ফরাক্কার ফিডার ক্যানালও নালার চেহারা নেওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও।

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি বদলের কোনও সম্ভাবনাও যে নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রতি দিন বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক জল দিতে বাধ্য থাকবে ভারত। তাই এ সপ্তাহে পরিস্থিতি বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই।

ব্যারাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ মার্চের পর থেকে টানা ১০ দিন চুক্তি অনুসারে ভারত কমপক্ষে ৩৫ হাজার কিউসেক জল পাবে। তখন সমস্যা কিছুটা বদলাবে। তবে, উত্তর ভারতে বৃষ্টি হলে জল সঙ্কট মিটবে কিছুটা দ্রুত। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘না হলে, অপেক্ষায় থাকতে হবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। কারণ, ওই সময়ে হিমালয়ে বরফ গললে সে জল নেমে আসবে নদীর নিম্ন অববাহিকায়।’’

গঙ্গার এমন জলসঙ্কটের কারণ খুঁজতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার পূজারীকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। এনটিপিসি, ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ এবং কেন্দ্রীয় জল কমিশনের মধ্যেও সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ জারি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গায় জল নেই, খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। এনটিপিসি-র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও সিকিমেও এর প্রভাব পড়তে পারে। সমস্যাটা অবিলম্বে কী করে মেটানো যায় তা দেখতে হবে।’’

উদ্বেগ গোপন করেননি ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্র হালদারও। তিনি বলেন, ‘‘আগামী সাত দিন পরিস্থিতি একই রকম থাকবে। ফিডার ক্যানালে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ হাজার কিউসেক জল রয়েছে। আশা করছি পরের সপ্তাহে অবস্থার উন্নতি হবে।’’ এখন প্রশ্ন, এই পরিস্থিতিতে ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হল কেন?

এনটিপিসি সূত্রের খবর, ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ফিডার ক্যানালের মাধ্যমে হুগলি নদীতে জলপ্রবাহ হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জল যায় ফিডার ক্যানাল থেকে। এই ক্যানালে এখন ১৫ হাজার কিউসেক জল রয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি দিন লাগে ৩০০ কিউসেক জল। কিন্তু ফিডার ক্যানালে জলস্তর এতটাই কমে গিয়েছে যে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় ওই ৩০০ কিউসেক জলও পাচ্ছে না।

এনটিপিসির এক কর্তা বলেন, ‘‘ফিডার ক্যানালে অন্তত ৩০ হাজার কিউসেক জল না থাকলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জলপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে না। কবে জলস্তর বাড়বে সে দিকে তাকিয়ে আছি।’’

এই পরিস্থিতির জন্য ২০০৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির দিকেই আঙুল তুলছেন সরকারি কর্তারা। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশ ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে গঙ্গার জল ভাগাভাগি করে নেয়। এই সময়ে পরিস্থিতি সব থেকে জটিল হয় ১১ মার্চ থেকে ১০ মে’র শুখা মরসুমে। এই সময় নদীতে জল থাকে সবচেয়ে কম। চুক্তির ২ বছরের মাথায় ২০০৬ সালেও একই সঙ্কট হয়েছিল। সেই সঙ্কটই ফিরে এসেছে এ বার।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এই ৬০ দিনের মধ্যে পালা করে প্রতি ১০ দিন অন্তর বাংলাদেশ ও ভারত ব্যারাজের সঞ্চিত জলের থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক পেয়ে থাকে। বাকি অংশ অন্য দেশ পায়। এ বার উত্তর ভারতে বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যারাজে জলস্তর কমে গিয়েছে। এর মধ্যেই ১১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক জল যাচ্ছে। ভারতের ভাগে জুটছে সাকুল্যে ১৫-১৬ হাজার কিউসেক। বিপত্তি এখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ganga water treaty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE