—ফাইল চিত্র।
মা রুবি নুরের মৃত্যুর পরে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জিতে রাজনীতিতে পা রাখেন মৌসম নুর। সেটা ২০০৮ সাল। পরের বছরই লোকসভা ভোটে তাঁকে মালদহ উত্তর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। গনিখান চৌধুরীর ভাগ্নীর সেই যুদ্ধে জিততে অসুবিধা হয়নি। তার পর থেকে মালদহে তাঁর হাতেই ছিল দলের দায়িত্ব। এ বারে, ২৩ মে সেই মৌসমের পতনেরই সাক্ষী রইল মালদহ।
গনি-ভাগ্নীর এই হারের জন্য তাঁর দলত্যাগকেই দায়ী করছেন জেলার মানুষ। বিশেষ করে কোতোয়ালির প্রতি এখনও যাঁরা সহানুভূতিশীল, তাঁদের কথায়, ‘‘ভোটের আগে দল ছেড়েই নিজের তরী ডোবালেন মৌসম।’’ অঙ্কের হিসেবেও সেটাই স্পষ্ট। মৌসম এবং তাঁর দাদা ইশা খান চৌধুরী মিলে পেয়েছেন সাত লাখের বেশি ভোট। উল্টো দিকে, বিজেপি প্রার্থী খগেন মুর্মু পেয়েছেন পাঁচ লাখ ভোট। অর্থাৎ, গনির গড় অটুট থাকলে অঙ্কের হিসেবে বিজেপি এই আসনে জেতে না।
শুধু মৌসমই নন, উত্তরবঙ্গে অন্য দল থেকে এসে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের কেউই এ বারের ভোটে সুবিধা করতে পারেননি। তালিকায় রয়েছেন কানাইয়ালাল আগরওয়াল, অমর সিংহ রাই, পরেশ অধিকারী, বিনয় তামাং। বরং পুরনো দলে ফিরে উপনির্বাচন জিতে আবার বিধানসভায় যাচ্ছেন করিম চৌধুরী।
শুভেচ্ছা: মালদহ উত্তর লোকসভায় জয়ী খগেন মুর্মু মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন হবিবপুর বিধানসভায় দলের জয়ী জোয়েল মুর্মুকে। ছবি: তথাগত সেনশর্মা
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ইসলামপুর কেন্দ্রে এই করিমকেই হারিয়েছিলেন কংগ্রেসের কানাইয়া। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারে লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে দল তাঁকে প্রার্থী করলে বিধায়ক পদ ছাড়তে হয়। এর মধ্যেই উপনির্বাচনেরও দিন জানিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। সেখানে করিমকে প্রার্থী করে তৃণমূল। বৃহস্পতিবারের ফল জানিয়ে দিল, আপাতত কানাইয়ার হাতে রইল শুধু ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পদ। লোকসভা ভোটে সেই পুরসভা থেকেও কিন্তু বিজেপি ‘লিড’ নিয়েছে। কানাইয়ার ওয়ার্ডেও তারা এগিয়ে। এক বছর বাদে সেখানে ভোট। ফলে তাঁর কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য।
২০১৭ সালে দার্জিলিঙে টানা ১০৫ দিন বন্ধের পরে মুখ্যমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে যোগ দেন মোর্চার বিনয় তামাং। তখনই বিমল গুরুং তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে দেগে দিয়েছিলেন। তার পরে বিনয় জিটিএ-র তত্ত্বাবধায়ক প্রধান হয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে মিলে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অমর সিংহ রাইয়ের জন্য প্রচার চালিয়েছেনে। সর্বোপরি বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। পাহাড় কিন্তু তাঁকে গ্রহণ করেনি। হেরেছেন মোর্চা ছেড়ে তৃণমূলের প্রতীকে লোকসভায় প্রার্থী হওয়া অমর সিংহ রাইও।
একই অবস্থা পরেশ অধিকারীর। ফব ছেড়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরপরই বিতর্ক তৈরি হয় তাঁর মেয়ের চাকরি নিয়ে। তার পরে পার্থপ্রতিম রায়ের বদলে পরেশকে প্রার্থী করা হয় কোচবিহারে। এই নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট প্রচারে এসে পার্থকে পাশে ডেকে সেই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেন। কিন্তু জেলায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব এতটাই তীব্র ছিল যে, সেই গোঁজেই আটকে গেলেন পরেশ। ভোট গণনার আগের দিন এই দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে হুঙ্কার দেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy