Advertisement
E-Paper

জয়ের হাসি দুই ‘গদ্দারের’

একদা কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেন মুকুলবাবুর হাত ধরে। কিন্তু অচিরেই তিনি হয়ে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৪:৩৭
জয়ের আভাস পেতেই। দুর্গাপুরে সৌমিত্র খাঁ। ছবি: বিকাশ মশান

জয়ের আভাস পেতেই। দুর্গাপুরে সৌমিত্র খাঁ। ছবি: বিকাশ মশান

লড়াই কঠিন ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিলেন তৃণমূলের দুই ‘গদ্দার’। ব্যারাকপুরে জয়ী অর্জুন সিংহ। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র খাঁ।

তবে বিজেপির অন্দরে গুঞ্জন, এ লড়াই কেবল বিজেপি এবং তৃণমূলের চার প্রার্থীর ছিল না। টানটান স্নায়ুর যুদ্ধ চলেছে শাসক দলের সংগঠনের সঙ্গে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। কারণ নাটকীয় পটভূমিকায় অর্জুন এবং সৌমিত্র— দু’জনকেই দলে এনেছেন এবং টিকিট দিয়ে জেতানোর ‘দায়িত্ব’ নিয়েছিলেন মুকুলবাবু।

একদা যে অর্জুনের সঙ্গে ‘আদায় কাঁচকলা’য় সম্পর্ক ছিল মুকুলবাবুর, তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার পর তাঁকেই নাটকীয় ভাবে এক রাতের মধ্যে বিজেপিতে এনে প্রার্থী করেছিলেন মুকুলবাবু। ব্যবহার করেছিলেন তৃণমূলে অর্জুনের প্রার্থী হতে না পারার ‘ক্ষোভ’। তাঁকে ব্যারাকপুরে প্রার্থী না করায় তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অর্জুন। সে রাতেই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লির বিমান ধরেন তিনি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘যা তোকে মুক্তি দিলাম।’’ খবর, সে রাতেই মুকুলবাবু অর্জুনকে কথা দিয়েছিলেন, তাঁকে জেতানোর জন্য সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।

বাস্তবে অর্জুনের জয় ‘কেক ওয়াক’ হয়নি। ভোটের দিন দৃশ্যত একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছেন ব্যারাকপুরের ‘বাহুবলী’। বুথে ঢুকতে পারেননি, রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়েছেন, তাড়া করেছেন বিরোধী দলের কর্মীদের। ভোটের ফলাফলেও সে প্রভাব দেখা গিয়েছে। দিনভর যৎসামান্য ভোটের ব্যবধানে কখনও এগিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী, কখনও অর্জুন। শেষ পর্যন্ত শেষ বলে ছক্কা মারার মতো লোকসভা ভোটের নিরিখে সামান্য ভোটের ব্যবধানে শেষ হাসি হেসেছেন তিনি। উপরি পাওনা, ভাটপাড়ার উপনির্বাচনে মদন মিত্রের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন অর্জুনপুত্র পবন সিংহ।

দিনের শেষে অর্জুনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভ নেই। তবে রাজ্যের মানুষ মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিয়েছেন।’’

আর সৌমিত্র খাঁ? একদা কংগ্রেসের বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মুকুলবাবুর হাত ধরে। কিন্তু অচিরেই তিনি হয়ে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। এতটাই যে, শুভেন্দু অধিকারীকে যুব তৃণমূলের পদ থেকে সরিয়ে অভিষেককে আনার জন্য সৌমিত্রকে ব্যবহার করা হয়েছিল। সামান্য কিছু দিনের জন্য তাঁকেই করা হয়েছিল যুব তৃণমূলের সভাপতি। অভিষেক সেই পদে আসীন হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বিষ্ণুপুর লোকসভার প্রার্থী পদ উপহার দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু সাংসদ সৌমিত্রের সঙ্গে ক্রমশ ব্যবধান তৈরি হতে শুরু করে অভিষেকের। প্রকাশ্যে অভিষেকের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ আনতে শুরু করেন তিনি। পাল্টা অভিষেকও বলেন, ‘‘মমতার ছবি ছেড়ে সৌমিত্র ভোটে জিততে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ বিষ্ণুপুরের সাংসদকে সাসপেন্ড করে দল। এবং সেই ক্ষোভকে ব্যবহার করেন মুকুলবাবু। জেতানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে বিজেপিতে নিয়ে আসা হয়। বিষ্ণুপুরের টিকিটও দেওয়া হয়।

মামলা এখানেই শেষ নয়। সৌমিত্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনে তৃণমূল। আদালত নির্দেশ দেয়, বাঁকুড়া জেলাতেই ঢুকতে পারবেন না সৌমিত্র। প্রচারে নামেন তাঁর স্ত্রী সুজাতা খাঁ। মুকুলবাবুর দাবি, ‘‘সৌমিত্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলের এই অস্ত্রই বুমেরাং হয়েছে। প্রার্থী কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন না, এই সহানুভূতিতেই মানুষের ভোট পেয়েছেন তিনি।’’

কার্যত একই কথা বলেছেন সৌমিত্র নিজেও। তাঁর কথায়, ‘‘খণ্ডঘোষে আমি প্রচারে গিয়ে কম ভোট পেয়েছি। কিন্তু আমার স্ত্রী রাজনীতিতে নবাগতা হলেও মানুষের মন জয় করে ছ’টি বিধানসভায় আমায় জয় এনে দিয়েছেন। আমি হেরেছি। সুজাতা জিতেছেন।’’

আর তৃণমূল প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘সম্মানের লড়াই ছিল। তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 Saumitra Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy