Advertisement
E-Paper

নতুন মামলা, জেল হেফাজতে গোদালা

এসজেডিএ-র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল শিলিগুড়ি আদালত। সোমবার দুপুরে চারদিন সিআইডি হেফাজতে থাকার পর ওই আইএএস অফিসারকে শিলিগুড়ি এসিজেএম দেবাঞ্জন ঘোষের আদালতে হাজির করানো হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০২:১৬
শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হচ্ছে গোদালা কিরণ কুমারকে। —নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ি আদালতে তোলা হচ্ছে গোদালা কিরণ কুমারকে। —নিজস্ব চিত্র।

এসজেডিএ-র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল শিলিগুড়ি আদালত। সোমবার দুপুরে চারদিন সিআইডি হেফাজতে থাকার পর ওই আইএএস অফিসারকে শিলিগুড়ি এসিজেএম দেবাঞ্জন ঘোষের আদালতে হাজির করানো হয়। সিআইডি সূত্রের খবর, ওই আইএএস অফিসারকে নতুন করে আরও ৬টি আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। হাজির করানোর পরে আদালত চত্বরেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার হাতের লেখার নমুনাও সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। শুনানির সময় সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বসুনিয়া বিচারককে জানান, ধৃতের পুলিশি হেফাজতের আপাতত প্রয়োজন না থাকলেও নতুন ৬টি মামলা, নতুন কিছু তথ্য যাচাইয়ের জন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন। সেখানে ধৃতকে জামিনে মুক্তি দিলে তিনি ‘প্রভাবশালী’ হওয়ায় তথ্য প্রমাণ নষ্ট আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

এদিন আড়াইটা থেকে প্রায় আধ ঘন্টা সরকার এবং অভিযুক্তপক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পরে এসিজেএম ধৃতের জামিনের আবেদন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। শুনানির পর প্রায় ঘন্টা দু’য়েক আদালতের লকআপে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় গোদালাকে। বিচারকের রায়ের পর বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সিআইডি-র অফিসারেরাই ধৃতকে গাড়ি করে শিলিগুড়ি সংশোধনাগারে যান। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘আগামী ৩ অগস্ট মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে। এর মধ্যে তদন্তকারী অফিসার গৌতম ঘোষালের যদি ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়, তাঁরা আদালতে নতুন করে আবেদন জানাবেন। আর হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। বিভিন্ন নথির সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে।’’

এর আগে একটি সিসিটিভি মামলায় ২০১৩ সালে নভেম্বর মাসে গ্রেফতার করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জামিন পান গোদালা। এর পরে গত ১৫ জুলাই ময়নাগুড়ির বৈদ্যুতিক শ্মশানের মামলায় তিনি ফের গ্রেফতার হন। এদিন নতুন আরও ছয়টি মামলায় গ্রেফতারি দেখানোর পর তার বিরুদ্ধে সিআইডি মোট ৮টি দুর্নীতির মামলা তদন্ত শুরু করল। নতুন মামলাগুলির মধ্যে বাগডোগরা ও মালবাজারের বৈদ্যুতিক চুল্লি, জোড়াপানি সংস্কার, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের নিকাশির প্রকল্প, বিদ্যুতের সাব স্টেশন ছাড়াও ই-টেন্ডারিং-এ জালিয়াতির মামলা রয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে কাজ না হলেও কাগজে কলমে তা দেখিয়ে প্রায় ৭৬ কোটি তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির পিনটেল ভিলেজে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় গোদালাকে। তার পরে দফায় দফায় জেরা করা ছাড়াও ময়নাগুড়ির প্রকল্প এলাকাতেও নিয়ে যাওয়া হয় ওই আইএএস অফিসারকে। সিআইডি সূত্রের খবর, ময়নাগুড়ির প্রকল্প শুধু কেন, কোনও প্রকল্প এলাকায়ই তিনি দেখেননি বলে বারবার জেরায় দাবি করে এসেছেন। বোর্ডের সিদ্ধান্তে বাস্তুকারদের তৈরি কাগজপত্র তিনি সই করেছেন মাত্র।

এদিন মামলায় তাঁর হয়ে মামলায় দাঁড়িয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার ছাড়াও তড়িৎ ওঝা, অভ্রজ্যোতি দাসেরা। রাজদীপবাবু আদালতে বলেন, ‘‘২০১৩ সালে প্রথম মামলায় তদন্তের দরকার নেই বলে সরকার পক্ষ দাবি করায় ধরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পান ওই আইএএস অফিসার। এখন নতুন মামলায় গ্রেফতার করে তদন্ত আরও দরকার বলছে। আর উনি তো এসজেডিএ প্রহরী ছিলেন না, যে সব কাজ করবেন। প্রদ্ধতি মেনে বাস্তুকার, অফিসারদের তৈরি কাগজে সই করেছেন মাত্র। আর নথিপত্রের উপর ভিত্তি করা মামলায় তো কাউকে আটকে রাখার প্রয়োজন হয় না। সবই তো সিআইডির কাছে রয়েছে।’’

তবে মামলার শুনানির প্রথম দিন সেই সময়কার বোর্ড সদস্যদের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ সামনে এনেছিলেন ধৃতের আইনজীবী। এমনকি, রাজনৈতিক কোনও কারণে কী গোদলাকে ফাঁসানো হচ্ছে কি না তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলা হয়। এদিন অবশ্য সেই প্রসঙ্গ তোলেননি কোনও আইনজীবী‌ই। শুধুমাত্র তদন্তের গতিপ্রকৃতি, নথিপত্র, জামিন এবং বাস্তুকারদের ভূমিকা নিয়ে সওয়াল জবাব হয়। তড়িৎবাবু বলেন, ‘‘সবই মামলার অঙ্গ। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আসবে।’’

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মাটিগাড়া থানা থেকে পিনটেল ভিলেজ হয়ে মাটিগাড়া ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে গোদালার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরে ১টা নাগাদ আদালতে আনা হয়। প্রথম থেকে আদালতে ছিলেন গোদালার স্ত্রী সামান্যা কিরণকুমার। এজলাসে কাঠগড়ার ফাঁক দিয়ে স্বামীর হাত ধরে তাঁকে বসে থাকতেও দেখা যায়। রায় ঘোষণার পর অবশ্য ভেঙে পড়েন সামান্যাদেবী। একসময় তাঁকে সংবাদ মাধ্যমের একাংশের দিকে তেড়ে গিয়ে ক্যামেরা হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে দেখা যায়।

মামলায় তৃতীয় পক্ষ হয়ে এদিন আরেকটি আবেদন করেন আইনজীবী অখিল বিশ্বাস। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসু’র হয়ে তিনি বিচারকের কাছে আবেদন করে জানান, জনস্বার্থে দুর্নীতির মামলায় টাকা উদ্ধার করা প্রয়োজন। যা ঠিকঠাক হচ্ছে না। আদালতের তত্ত্বাবধানে তা দেখা দরকার। অখিলবাবুদের প্রথম দিনের আবেদনটি গৃহীত হয়েছে।

jail custody 14 day godala kiran kumar sjda scam kiran kumar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy