বাড়ির দাওয়ায় সালেহার বিবি।
রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। লাল দুর্গ গড়বেতা এখন সবুজ। তবু পশ্চিম মেদিনীপুরের এই তল্লাটে রাজনীতির হানাহানিতে দাঁড়ি পড়ছে না। এলাকা দখল ঘিরে এখনও চলছে গুলি- বোমার লড়াই। খুন-জখমও অব্যাহত। এমনকী স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী মানছেন, “এখনও এলাকায় বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। তাই এত অশান্তি। পুলিশকে বলেছি, এগুলো উদ্ধার করতে!”
শুক্রবারই তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে গ়ড়বেতার একাড়িয়ায় প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। জখম হয়েছেন ১২ জন। নিহতের মধ্যে এক বৃদ্ধ ও মহিলাও রয়েছেন। তাঁরা সাধারণ তৃণমূল সমর্থক। শাসকের এই কোন্দলে মানুষ বিরক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা আশিক পাঠান, মনসুম মণ্ডল, সাদেকজান বিবিরা বলছেন, “তৃণমূলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। মারামারি-গোলমালের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি যদিও বলছেন, “যারা খারাপ কাজ করছে, তাদের দল থেকে বের করে দেওয়া হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘যা দেখছেন সব সিপিএম করাচ্ছে।”
তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে অবশ্য শোনা যাচ্ছে, স্বস্তির বাতাবরণ খুব একটা নেই। বরং গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা তৃণমূলের একাংশ নেতা। একাধিকবার দলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি বদল হয়েছে। কয়েক মাস আগেই দিলীপ পালকে সরিয়ে তৃণমূলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি করা হয় সেবাব্রত ঘোষকে। দিলীপ ব্লক সভাপতি থাকার সময় তাঁর সঙ্গে বিরোধ ছিল এলাকার তৃণমূল নেতা অসীম সিংহের। এখন অসীম সেবাব্রত-শিবিরে ভিড়েছেন। তবে দ্বন্দ্বে দাঁড়ি টানা যায়নি। গড়বেতা থেকে গিয়েছে গড়বেতাতেই!
তিন-তিনজনের মৃত্যুর পরে জরুরি বৈঠকে বসেছে তৃণমূল। শুক্রবার বিকেলে দলের ব্লক কার্যালয়ে এই বৈঠকে ছিলেন আশিসবাবু, সেবাব্রতবাবুরা। বৈঠকে আশিসবাবু জানিয়ে দেন, একাড়িয়ার মতো ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, মারামারির ঘটনা আর মানা হবে না! কেউ এমন ঘটনায় জড়ালে দল তার পাশেও থাকবে না। গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গড়বেতার বিধায়ক অবশ্য জরুরি বৈঠকের ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ। তাঁর কথায়, “একাড়িয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কর্মীদের যা বলার বলে দিয়েছি!” একই সঙ্গে আশিসবাবু মানছেন, “কিছু লোক দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা করা হবে।”
নিহত আসমা বিবি।
শুক্রবার দুপুরে পোড়া বাড়ির উঠোনে বসেছিলেন সালেহার বিবি। গোলমালে প্রাণ হারিয়েছেন সালেহার স্বামী আলম মণ্ডল, বৌমা আসমা বিবি। চোখের জল মুছে বৃদ্ধা বলছিলেন, “সব তো শেষ। আমাদের এখানে আর শান্তি ফিরবে না।” পালাবদলের প্রায় ছ’বছর শান্তিরই খোঁজ করছে গড়বেতা।কেন এই গোলমাল? দলের এক সূত্র মানছে, সবের নেপথ্যেই টাকা। এলাকায় যার প্রভাব থাকে, তার টাকার অভাব হয় না। প্রভাবশালী সেই সব নেতাদের সঙ্গে ঠিকাদারদের অশুভ আঁতাঁত কাজ করে। সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন কাজের টাকা ভাগবাঁটোয়ারাও হয়। একাংশ নেতা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে তোলাবাজিও করে। তৃণমূলের এক কর্মীর কথায়, “যত গোলমাল তোলাবাজি ঘিরে। কয়েকজন নেতার পকেটে টাকা ঢুকছে। আর কর্মীরা বসে বসে মার খাচ্ছে। আমাদের মতো অনেকেই মনে করেছিলেন, রাজ্যে পরিবর্তন এলে মস্তানরাজ, গুন্ডারাজ শেষ হয়ে যাবে। তা হয়নি।” তৃণমূলের এক নেতার আবার সাফাই, “অনেক বামপন্থী মানুষ আমাদের সঙ্গে এসেছেন। তবে ঝাড়াই- বাছাইটা ঠিক হয়নি। কিছু বেনোজল ঢুকে পড়েছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy