Advertisement
E-Paper

ধর্নায় গৌতম, বিরোধীরা বলছে নাটক

এই সে দিনও ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। কিন্তু পুরভোটের ধাক্কায় রাতারাতি তাঁর দাপট কমেছে। আজ, সোমবার দু’দিনের সফরে শিলিগুড়ি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটে হারের পর তাঁর দলনেত্রীর রোষে পড়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে অতি তৎপর হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৪:১৪
শনিবার রাতে শিলিগুড়ির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তায় অবস্থানে বসেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শনিবার রাতে শিলিগুড়ির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তায় অবস্থানে বসেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

এই সে দিনও ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। কিন্তু পুরভোটের ধাক্কায় রাতারাতি তাঁর দাপট কমেছে। আজ, সোমবার দু’দিনের সফরে শিলিগুড়ি আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটে হারের পর তাঁর দলনেত্রীর রোষে পড়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে অতি তৎপর হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ‘লাল সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থান করেছেন গৌতমবাবু। রাতভর তাঁর বাক্যবাণের সামনে দাঁড়াতে না পেরে পিছু হঠতে হয়েছে ওসি, আইসি, এসিপি এমনকী শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকেও!

শনিবার মন্ত্রীর অবস্থানের সময়ে পুলিশ যত পিছু হঠেছে, ততই মন্ত্রীকে ঘিরে থাকা অনুগামীদের স্লোগানে কেঁপে উঠেছে নিশুতি রাতের পাড়া! রবিবার দিনভরও শহর এবং লাগোয়া নানা এলাকায় গৌতমবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলের নানা কর্মসূচি হয়েছে। কখনও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য যে ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন, সেখানে পুরসভার লোকজনকে নিয়ে গিয়ে নর্দমা সাফাইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পরে অশোকবাবুকে ‘খুনের নায়ক’ বলে গ্রেফতারের দাবিতে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কখনও আবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাতের আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করার সঙ্গে সঙ্গে বোর্ড গঠনের চেষ্টার ইঙ্গিতও দিয়েছেন গৌতমবাবু। শনিবার রাত থেকে এমন নানা কাণ্ড দেখার পরে শিলিগুড়ির ভুক্তভোগী আমজনতা ও শহরের বিশিষ্ট জনদের অনেকেরই অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে ‘নাটক’ করে পুরভোটে হারের দোষ কাটাতে চাইছেন গৌতমবাবু! মন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ‘‘বামেরা শিলিগুড়ি পুরসভায় জিতে আবার লাল সন্ত্রাস কায়েম করছে। যার নায়ক অশোক ভট্টাচার্য। দলের এক হরিজন কর্মী আক্রান্ত হয়েছে শুনে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে রাতভর অবস্থানে ছিলাম। আবেগের ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। পুলিশকে কিছু বলিনি। আক্রান্ত মানুষের
জন্য আন্দোলনকে নাটক বলাটা সুরুচির পরিচয় নয়।’’

কিন্তু শহরের নানা মহলে তো বটেই, তৃণমূলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে, কোথাও সন্ত্রাস হলে মন্ত্রী ফোন করে পুলিশকে বললেই তো কাজ হওয়ার কথা। তা হলে তাঁকে কেন অবস্থানে বসে প্রকাশ্যে পুলিশকে দু’কথা শোনাতে হবে? গৌতমবাবুর যুক্তি, ‘‘নেতা ও মন্ত্রী হিসেবে যে আক্রান্তের পাশে আছি, সেটা বোঝাতে রাস্তায় নেমেছি। দরকার হলে অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ির অদূরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করব।’’

গৌতমবাবুর বক্তব্য শুনে শিলিগুড়ির সিপিএম নেতা তথা বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী অশোকবাবুর কটাক্ষ, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর মনে হয়, শরীরটা ভাল নেই! ওঁর কিছু দিন বিশ্রামের প্রয়োজন। ভোটে হেরে খোদ মন্ত্রী তাঁর সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধে রাতভর অবস্থান করছেন! উনি কেন এ সব করছেন, তা ওঁর দলের লোকেরা অনেকেই জানেন।’’এই সঙ্গেই অশোকবাবুর দাবি, ‘‘শিলিগুড়ি পুরসভায় ৪৭ আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১৭টি আসন। তৃণমূল বিরোধীরা পেয়েছেন ৩০টি আসন। ফলে ২৩টি আসন পাওয়ার সুবাদে নির্দলকে নিয়ে আমরাই বোর্ড গড়ব। তা ছাড়া, তৃণমূলের ৩ জন কাউন্সিলরও আমাকে ফোন করে সমর্থন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই গৌতমবাবু আগে ঘর সামলান!’’

শিলিগুড়ি পুরসভায় বোর্ড গঠন নিয়েই এখন তৎপরতা চরমে। বামফ্রন্টের অভিযোগ, শিলিগুড়িতে হেরে গিয়ে তৃণমূল মরিয়া হয়ে বামেদের বোর্ড গঠনে বাধা দিতে চাইছে। এমনকী নিজেরা বোর্ড গড়তে চেয়ে ঘোড়া কেনাবেচার চেষ্টাও করছে। মুখ্যমন্ত্রীও এই চক্রান্তে জড়িত বলে অভিযোগ বামেদের। এ দিকে, ১০ মাস ধরে শহরে কোনও পুরবোর্ড নেই। ফলে পুর পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় বোর্ড গঠনে আরও বিলম্ব ঘটানোর নিন্দা করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘টাকা, ক্ষমতা, সুযোগ সুবিধা বিলি করে অথবা ভয় দেখিয়ে মানুষের রায়কে অমর্যাদা করার চেষ্টা চললে সর্বতো ভাবে তার বিরোধিতা করা হবে।’’

বামেদের সর্মথনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও। বর্ধমানের বুদবুদে এ দিন এক সভার পরে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দেখব। আমরা তো আর তৃণমূলকে সমর্থন করতে পারি না!’’

গৌতমবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘বামেরা ২৩ পেলেও বাম বিরোধীরা ২৪ পেয়েছেন। সুতরাং, শহর বামেদের দখলে ভাবা ভুল হবে।’’ তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েনও বলেছেন, ‘‘সিপিএমকে শহরের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই
হতাশা থেকে তারা নোংরা রাজনীতি করছে।’’ বামেদের পাল্টা যুক্তি,
তাদের পাশাপাশি কংগ্রেস বা বিজেপি-র জয়ও তো আসলে তৃণমূল-বিরোধী ভোটেই!

ঘটনা হল, পুরভোটে অশোকবাবুর নেতৃত্বে বামেরা ২৩টি আসন পাওয়ার পরে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন গৌতমবাবু। বিশেষত, তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র সংযোজিত এলাকার ১৪টি ওয়ার্ডে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূল। মন্ত্রীর একান্ত অনুগামী কয়েক জনের ভূমিকা নিয়ে দলে সমালোচনা চলছে। সে জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গৌতমবাবুর অনুগামীদের একাংশ মরিয়া হয়ে নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেছে বলে মনে করছে
দলেরই একাংশ।

শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এক মহিলার বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে এলাকারই বাসিন্দা বাবলু সাইমন্ডের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে রাত ১১টার পরে অভিযোগ দায়ের হয় এনজেপি ফাঁড়িতে। অভিযুক্ত বাবলুকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। এর পরে রাত ১২টা নাগাদ গৌতমবাবু দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ওই মহিলার বাড়ির সামনের মাঠে অবস্থানে বসেন। অভিযুক্ত যে গ্রেফতার হয়েছে, সে কথা মন্ত্রীকে জানাতে গিয়ে পুলিশ অফিসারদের তাঁর কাছে ধমক খেতে হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের মহিলা কর্মী এবং তাঁর দুই মেয়ের শ্লীলতাহানির আর একটি অভিযোগ করা হয় রাত দু’টো নাগাদ। ভোরে মন্ত্রী অবস্থান তুলে নেন। পুলিশ কমিশনার এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘এই সরকারের আইনমন্ত্রী ধর্নায় বসেন! এক মন্ত্রী জেলে, তবু তাঁর মন্ত্রিত্ব যায় না! এমন নাটক দেখতে দেখতে মানুষ এখন বিরক্ত।’’

Dharna Siliguri Goutam deb CPM goons Trinamool BJP CPM Congress Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy