Advertisement
E-Paper

রাজ্য জমি ফিরিয়ে নেওয়ায় নতুন আশা

সচরাচর যা হয় না শেষ পর্যন্ত তা-ই হল। আইন মেনে বেলুড়ের বন্ধ ইন্দো-জাপান ইস্পাত কারখানার জমি ফিরিয়ে নিল রাজ্য সরকার। দীর্ঘ দিন ধরে এই দাবিতেই আন্দোলন করছিলেন ওই কারখানার শ্রমিকরা, যাঁরা বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালটি চালান। তাঁদের দাবি ছিল, সরকার বন্ধ কারখানাটির জমি ফিরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য দিক। আন্দোলনের প্রথম দাবি আদায় হয়েছে। এ বার অপেক্ষা হাসপাতালের জন্য জমিটি হাতে পাওয়ার।

সুকান্ত সরকার

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩

সচরাচর যা হয় না শেষ পর্যন্ত তা-ই হল। আইন মেনে বেলুড়ের বন্ধ ইন্দো-জাপান ইস্পাত কারখানার জমি ফিরিয়ে নিল রাজ্য সরকার। দীর্ঘ দিন ধরে এই দাবিতেই আন্দোলন করছিলেন ওই কারখানার শ্রমিকরা, যাঁরা বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালটি চালান। তাঁদের দাবি ছিল, সরকার বন্ধ কারখানাটির জমি ফিরিয়ে নিয়ে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য দিক। আন্দোলনের প্রথম দাবি আদায় হয়েছে। এ বার অপেক্ষা হাসপাতালের জন্য জমিটি হাতে পাওয়ার।

বন্ধ ইন্দো-জাপান কারখানার জমির মালিকানা দাবি করে গ্র্যান্ড স্মিথি নামে একটি সংস্থা। ফলে জটিলতা তৈরি হয়। কারখানার শ্রমিকদের পাল্টা দাবি ছিল, ওই জমি খাস এবং তার মালিক খোদ রাজ্য সরকার। ওই জমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে রাজ্যের ভূমি দফতরের কাছে আবেদনের পাশাপাশি শ্রমিকরা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ‘আইন মানো’ আন্দোলনও শুরু করেন। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে জমির মালিকানা কার, তা নিশ্চিত করতে শ্রমজীবী হাসপাতাল, গ্র্যান্ড স্মিথি-সহ সব পক্ষের বক্তব্য শোনে ভূমি দফতর। সেখান থেকেই সরকার নিশ্চিত হয় যে, জমিটি খাস। এর পরই জমিটি অধিগ্রহণ করে সেই সিদ্ধান্ত গত ২০ মার্চ সব পক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় ভূমি দফতর।

রাজ্যের সর্বত্রই শ্রমিক সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে বন্ধ কারখানার জমি অধিগ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তাতে সে ভাবে সাড়া দেয়নি। ফলে হাওড়া বা ব্যারাকপুরের মতো শিল্পাঞ্চলে একের পর এক বন্ধ কারখানার জমিতে প্রোমোটাররা থাবা বসিয়েছে।
সেখানে তৈরি হয়েছে সারি সারি বহুতল। এর আগে হিন্দ মোটরের কিছু জমি সরকার ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু জমিটি তারা ফের ওই কারখানার মালিককেই ফেরত দেয় আবাসন তৈরির জন্য। আবাসন বিক্রির টাকা থেকে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মেটানো হবে বলে মালিকপক্ষ সরকারকে কথা দিয়েছিল।

বন্ধ কারখানার জমি ‘বেহাত’ হওয়ার এই সব অভিজ্ঞতার মধ্যে ইন্দো-জাপানের ঘটনায় আপ্লুত সেখানকার শ্রমিকরা। ইন্দো-জাপান স্টিলস লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এবং শ্রমজীবী হাসপাতালের প্রধান কারিগর ফণিগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কারখানার ওই ১৪ বিঘে জমি সরকার যাতে ফিরিয়ে নেয়, সেই দাবিতে চার বছর আগে ‘আইন মানো’ আন্দোলনে নেমেছিলাম। সরকার জমি অধিগ্রহণ করায় আমাদের প্রাথমিক দাবিটি আদায় হল। আশা করি, হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য
ওই জমি সরকার আমাদের দেবে। আমরাই একমাত্র স্বীকৃত দাবিদার।’’ হাসপাতাল জমিটা পাবে কি না জানতে চাইলে হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) অংশুমান অধিকারী বলেন, ‘‘শ্রমজীবীর আবেদন সরকার অবশ্যই বিবেচনা করে দেখবে।’’

ফলে এখন শুধু ফণীবাবুই নন, জমি ফেরত পেতে আশাবাদী তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র প্রদেশ কমিটির কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ বন্দোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শ্রমজীবী হাসপাতাল আমাদের পাশে ছিল। ওরা গরিব মানুষের বড় ভরসা। স্বাস্থ্য নিয়ে শ্রমজীবী ব্যবসা করে না।’’

জমিটা পেলে গরিব মানুষের জন্য সেখানে একটা মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হবে জানিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শ্রমজীবী হাসপাতালের কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ইন্দো-জাপানের অধিগৃহীত জমি থেকে হাসপাতাল সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি শ্রমজীবী যে পাবে, সে ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’

তবে জমিটা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেন না শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যতম সংগঠক গৌতম সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই জমিটা ১৯৯৭ সালেই সরকার অধিগ্রহণ করতে পারত। তা করেনি। ১৮ বছর সময় লাগল! এখন দেখা যাক, শ্রমজীবীকে জমিটা দিতে এই সরকার কত দিন সময় নেয়!’’

তবে গৌতমবাবু যা-ই বলুন, বেলুড়ে আজ ‘বসন্ত’। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্পের সম্পাদক চিকিৎসক অনিল সাহা বললেন, ‘‘বামফ্রন্ট যা ১৪ বছরে পারেনি, এই সরকার তা চার বছরে করে দেখাল। তাই, আশা করার সাহসটা পাচ্ছি।’’

তবে, জমি না পেলে ফের পথে নামবেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন শ্রমজীবীরা।

indo japan steel factory land of factory belur factory inttuc belur hospital state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy