আগেকার বিভিন্ন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ত্রাণকাজ নিয়ে নানান অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচিকে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই ওই কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে সরকারি হাতে। এ বার ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচির পরিচালনভারও সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে জোরদার ভাবনাচিন্তা চলছে প্রশাসনের অন্দরে। পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে ওই কর্মসূচিও পুরোপুরি মুক্ত থাকবে।
তৃণমূল সরকারের দ্বিতীয় দফায় রেশন নিয়ে কিছু দিন বেশ ঘোরতর সমস্যা হয়েছিল। নানা ধরনের অভিযোগ উঠছিল রেশন বিলি নিয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে নবান্নের শীর্ষ মহলের হস্তক্ষেপে। তার পরে রেশন বণ্টনের পদ্ধতিতে বিভিন্ন সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যা এখনও পর্যন্ত বলবৎ আছে। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘দুয়ারে রেশন’ নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে, তা হবে ‘ভুলত্রুটি’ শোধরাতে সরকারের জোরদার বার্তা।
বিধানসভা ভোটের প্রচারে ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করার বার্তাও দিয়েছে তৃণমূল সরকার। সেই কাজ কী ভাবে সম্পন্ন করা যায়, এখন তারই পরিকল্পনা চলছে প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, এই কর্মসূচি বহরে বিপুল এবং পদ্ধতিটি কার্যক্ষেত্রে সমধিক জটিল। এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা তাতে, ওই বিপুল কর্মকাণ্ডে বেসরকারি কোনও পেশাদার সংস্থা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহযোগিতা নেওয়া হবে না। বরং সরকারি নজরদারিতেই তা পরিচালিত হবে। পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে ইতিমধ্যে কয়েকটি বাছাই করা জায়গায় পরীক্ষামূলক ভাবে রেশন বিলি করেছে খাদ্য দফতর। তাতে কাজে লাগানো হয়েছে রেশন ডিলারদেরই। এক জেলা-কর্তা বলেন, “কাজ হয়েছে জেলাভিত্তিক ফুড ইনস্পেক্টরদের নজরদারিতেই। রাজ্য সরকার চূড়ান্ত রূপরেখা জানালে সে-ভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
প্রশাসনের অন্দরমহলের দাবি, নিখরচায় রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার রেশনসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পালা। বেশ কয়েক কোটি উপভোক্তার বাড়িতে ওই পণ্য পৌঁছে দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাথাপিছু পাঁচ কিলোগ্রাম চাল প্রতি মাসে পেয়ে থাকেন উপভোক্তারা। সেই হিসেবে এক-একটি পরিবারে ২০-২৫ কেজি চাল পাঠাতে হবে। এলাকার ভিত্তিতে পণ্যের পরিমাণ হবে বিপুল। রেশন ডিলারদের কী ভাবে এই কাজে লাগানো যায়, তা নিয়েও খাদ্য চফতরে চর্চা চলছে।
গোটা প্রক্রিয়াটি অভিযোগমুক্ত করে তোলার পরিকল্পনা করছে খাদ্য দফতর। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের বক্তব্য, রেশন তোলার নতুন ব্যবস্থাপনা এ ক্ষেত্রে খুবই সহযোগী হবে। এখন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ দিয়ে তবে রেশন তোলার পদ্ধতি দ্রুত বলবৎ করা হচ্ছে। ফলে ইচ্ছুক উপভোক্তার রেশনসামগ্রী বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ‘দুয়ারে রেশন’ কর্মসূচিতে এই প্রযুক্তি অতিরিক্ত রক্ষাকবচের কাজ করবে বলেই দাবি আধিকারিকদের। এক কর্তা বলেন, “রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার এবং ফোন নম্বর যুক্ত করার কাজ শেষ হয়ে গেলে প্রকল্পে রক্ষাকবচের সুরক্ষা আরও বেড়ে যাবে। বায়োমেট্রিকে আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন তোলার পরে এসএমএস যাবে উপভোক্তার কাছে। ফলে গোটা প্রক্রিয়াটা দেখভাল করা অনেক সহজ হবে।”