Advertisement
E-Paper

ফাজিলে মেধা তালিকায় প্রথম হুগলির হাবিবুল্লাহ

ফাজিলে প্রথম স্থানে জ্বলজ্বল করছে চণ্ডীতলার কুমিরমোড়া শেখপাড়ার বাসিন্দা শেখ হাবিবুল্লাহর নাম। জাঙ্গিপাড়ার সীতাপুর এনডাওমেন্ট সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রটি ৬০০-র মধ্যে পেয়েছে ৫৪০ নম্বর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০২:৩৩
ফাজিলে প্রথম শেখ হাবিবুল্লাহ (বাঁদিকে) ও ফাজিলে চতুর্থ শেখ মাসুম।

ফাজিলে প্রথম শেখ হাবিবুল্লাহ (বাঁদিকে) ও ফাজিলে চতুর্থ শেখ মাসুম।

বৃহস্পতিবার হাই-মাদ্রাসা, আলিম, ফাজিলের ফল বেরিয়েছে। মাধ্যমিক সমতুল আলিম এবং উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল ফাজিলে হুগলির একাধিক পড়ুয়া মেধা-তালিকার প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে।

ফাজিলে প্রথম স্থানে জ্বলজ্বল করছে চণ্ডীতলার কুমিরমোড়া শেখপাড়ার বাসিন্দা শেখ হাবিবুল্লাহর নাম। জাঙ্গিপাড়ার সীতাপুর এনডাওমেন্ট সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রটি ৬০০-র মধ্যে পেয়েছে ৫৪০ নম্বর। সে আরবি সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করতে চায়। গত বছর বাবা শেখ আব্দুল হালিম মারা গিয়েছেন। মা রাকিবা বেগম গৃহবধূ। চার ভাইবোনের মধ্যে মেজো হাবিবুল্লাহ জানায়, চাচারা তাদের দেখাশোনা করে। চাচা, মাদ্রাসা-শিক্ষক শেখ সেলিমের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা চলছে। সেলিমের কথায়, ‘‘ভাইপোর সাফল্যে গোটা এলাকা খুশি।’’ বিকেলে বাড়িতে গিয়ে হাবিবুল্লাহর উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে সাহায্যের আশ্বাস দেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়।

৫৩২ নম্বর পেয়ে ফাজিলে যুগ্ম চতুর্থ ডানকুনি সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শেখ মাসুম। আলিমে সে দশম হয়েছিল। কামারকুণ্ডুর মুস্তাফাপুরের বাসিন্দা মাসুমের ইচ্ছে, ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়ার। তবে কৃষক পরিবারের ছেলেটি জানায়, ছেলেবেলা থেকে স্থানীয় হোসেনপুরের বাসিন্দা মৌলানা লুৎফর রহমনের কাছে সে পড়ে। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মাসুম মেজো। ভাই আলিম এবং এক বোন হাই-মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে। সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে মাসুমকে শুভেচ্ছা জানান স্থানীয় বিধায়ক বেচারাম মান্না।

হরিপালের হরিপুর চকের ইসলামনগর (দঁক) নাসরুল উলুম সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়ে আলিমে আব্দুর রজ্জাক খান চতুর্থ এবং শেখ ইমতিয়াজ নবম স্থানে রয়েছে। দু’জনেই জাঙ্গিপাড়ার সীতাপুরে আলফারা মিশন পরিচালিত দারুন্নেদা সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেছে। ৯০০-র মধ্যে রজ্জাকের প্রাপ্ত নম্বর ৮১৮। হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের জালালসি গ্রামে রজ্জাকদের টালির বাড়ি। বাবা আব্দুল কাসেম খান রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা রুকসানা বেগম গৃহবধূ। ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ঘরে অভাব। বাড়িতে টিভি পর্যন্ত নেই। রজ্জাক জানায়, সে আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়তে চায়। তবে দারিদ্রকে হারিয়ে উচ্চশিক্ষার পথ কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়ে সে চিন্তায়।

হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়ো দরগাতলায় ইমজতিয়াজদের টালির চালের মাটির বাড়িতেও দারিদ্রের চিহ্ন। বাবা হামিদ ফকির গাড়ি সারানোর কাজ করেন। দাদা এসি সারান। ভাই দশম শ্রেণির পড়ুয়া। মা হাসিনা বেগম গৃহবধূ। ইমতিয়াজ বলে, ‘‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু পরিবারের যা অবস্থা, তাতে সেই ইচ্ছে ত্যাগ করে আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়ব ঠিক করেছি।’’

আরামবাগের হরিণখোলার পিরনগর নবাবিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার কাজি মহম্মদ জবিউর রহমান আলিমে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। চণ্ডীতলার আকুনি গ্রামের এই ছেলেটিকেও দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বাবা কাজি মহম্মদ নবিউর রহমান কখনও দিনমজুরি, কখনও ভাগে চাষ করেন। স্ত্রী আনারকলি শবনম, দুই ছেলে, এক মেয়ের সংসার চলে সেই আয়েই। বড় ছেলে জবিউর নিখরচায় মাদ্রাসার ছাত্রাবাসেই থাকত। তবে ইংরাজি, অঙ্কে গৃহশিক্ষক ছিল। জবিউর জানায়, সে-ও আরবিতে উচ্চশিক্ষা করতে চায়।

হুগলি থেকে এত জন কৃতী ছাত্রকে দেখে খুশি ‘মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতি’র জেলা সম্পাদক ও রাজ্যের মুখপাত্র সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘ওদের অনেককেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। ওদের এই সাফল্য অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।’’

Education Fazil Examination 2019 Hoogly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy