Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বড়বাজারে হাওয়ালার নয়া আঁতুড়, জালে বাংলাদেশি

ধাক্কা খেয়ে মাঝখানে থমকে ছিল মাস দুয়েক। কিন্তু গত কয়েক দিনে কলকাতা বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় টাকা, বিদেশি মুদ্রা আর সোনা বাজেয়াপ্ত করার পরে শুল্ক অফিসারেরা নিশ্চিত, হাওয়ালা কারবার আবার পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৯
Share: Save:

ধাক্কা খেয়ে মাঝখানে থমকে ছিল মাস দুয়েক। কিন্তু গত কয়েক দিনে কলকাতা বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় টাকা, বিদেশি মুদ্রা আর সোনা বাজেয়াপ্ত করার পরে শুল্ক অফিসারেরা নিশ্চিত, হাওয়ালা কারবার আবার পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে। এবং আশঙ্কার কথা হল, কলকাতায় ক্রমেই এই কারবারের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে বড়বাজার।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে ডলার ছাড়াও বিপুল পরিমাণ ভারতীয় টাকা সঙ্গে রাখার অভিযোগে কলকাতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন তিন ভারতীয় নাগরিক। মঙ্গলবার সকালে সুমন আহমেদ নামে এক বাংলাদেশি বিমানযাত্রীর কাছ থেকে হিসাব-বহির্ভূত প্রচুর টাকা পেয়েছে শুল্ক দফতর। প্রতিটি ক্ষেত্রেই হাওয়ালা ব্যবসায় বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছিল বলে মনে করছেন শুল্ক বিভাগের অফিসারেরা।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ঢাকার বাসিন্দা সুমন আহমেদ গত সোমবার ঢাকা থেকে বিমানে কলকাতায় আসেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি বড়বাজারে যান। সেখানে বিদেশি মুদ্রা ভাঙিয়ে ৬৯ লক্ষ ৩৬ হাজার ভারতীয় টাকা নেন। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

এই ঘটনার পরেই খোঁজখবর নিয়ে শুল্ক অফিসারদের ধারণা হয়েছে, বড়বাজারে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অবৈধ কারবার চলছে রমরমিয়ে। এর আগেও বেশ কয়েক জন যাত্রী হিসাব-বহির্ভূত টাকা রাখার অভিযোগে ধরা পড়ে জানিয়েছিলেন, তাঁরা বড়বাজার থেকে বিদেশি মুদ্রা ভাঙিয়েছেন। অফিসারদের দাবি, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে তাঁরা রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এক শুল্ক অফিসারের কথায়, ‘‘শুধু বিদেশি মুদ্রা বদলে দেওয়াই নয়, সোনা পাচার, হাওয়ালা কারবার-সহ নানা ধরনের বেআইনি কাজকর্মের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে বড়বাজার।’’ যথাসময়ে তথ্য দিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে এ-সব জানানোও হয়েছে বলে দাবি শুল্ক অফিসারদের।

শুল্ক বিভাগ সূত্রের খবর, বড়বাজার থেকে ভাঙিয়ে নেওয়া ওই ৬৯ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ছাড়াও সুমনের কাছে ছিল এক লক্ষ ২১ হাজার রিয়াল, সাত হাজার ১০০ দিরহাম, এক হাজার ৭০০ ইউরো এবং পাঁচ হাজার ৮৭০ পাউন্ড বিদেশি মুদ্রা। ভারতীয় টাকায় প্রায় ২৮ লক্ষ ৬৭ হাজার। জেরার মুখে সুমন জানিয়েছেন, তিনি জামাকাপড় ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির ব্যবসা করেন। ব্যবসার সূত্রেই ওই টাকা নিয়ে কুয়ালা লামপুর যাবেন বলে এয়ার এশিয়া বিমান সংস্থার উড়ান ধরতে সোমবার গভীর রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন। সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করেন শুল্ক অফিসারেরা। তাঁদের সন্দেহ, ওই বিপুল অঙ্কের টাকার একটি অংশ ব্যবসার কাজে লাগলেও বাকি টাকা হাওয়ালার জন্যই নিয়ে যাচ্ছিলেন সুমন। অত টাকা তিনি কোথায় পেয়েছেন, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গত রবিবার রাতে ৩৭ লক্ষ ভারতীয় টাকা এবং সোমবার রাতে ৮০ লক্ষ টাকার সমমূল্যের মার্কিন ডলার বেআইনি ভাবে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করেন শুল্ক অফিসারেরা। তার কয়েক দিন আগে হাওড়া স্টেশন এবং সদর স্ট্রিটের একটি হোটেল থেকে প্রচুর সোনা বাজেয়াপ্ত করেছিল শুল্ক দফতরের গোয়েন্দা বিভাগ ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) বা রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hawala Barabazar Bangladeshi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE