অবাক জলপান। শনিবার আলিপুর চিড়িয়াখানায় রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।
অশনি সঙ্কেত।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের মতো কলকাতাতেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর তেমনই আশঙ্কা করছে। শনিবার তারা জানিয়েছে, গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই তাপমাত্রা বাড়বে। বাতাসের জলীয় বাষ্প কমে গিয়ে তাপপ্রবাহ বা লু বইবে।
রেহাই নেই উত্তরবঙ্গেরও। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বাঁকুড়ায় শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৪৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মালদহে তাপমাত্রা চড়েছে ৪০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেখানেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন আবহবিদেরা।
চৈত্রের এখনও কয়েক দিন বাকি। শিক্ষা দফতরের ক্যালেন্ডারে গরমের ছুটির সময়ও আসেনি। কিন্তু গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক পড়ুয়া। সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে তাই অনির্দিষ্ট কাল ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। এ দিন শিক্ষাসচিবের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, কাল, সোমবার থেকে আবার কোনও নির্দেশ জারি না-হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক গরমের জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’’ তবে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, ক্লাস না হলেও স্কুল খোলা থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে যেতে হবে।
দিল্লি বোর্ডের অধীন বেসরকারি স্কুলগুলিকেও ক্লাস বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে শনিবার জানান শিক্ষামন্ত্রী। তবে এই সরকারি নির্দেশের প্রেক্ষিতে সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের অধীন বেসরকারি স্কুলগুলিতেও ক্লাস বন্ধ রাখা হবে কি না, সে ব্যাপারে এ দিন স্পষ্ট জানা যায়নি। ‘লা মার্টিনিয়ের স্কুল ফর বয়েজ’-এর সেক্রেটারি সুপ্রিয় ধর বলেছেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি পেলে ভেবে দেখা হবে।’’ সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে জানিয়েছেন, দু’টি শিক্ষাবর্ষের মাঝখানে এখন এমনিতেই তাঁদের ক্লাস হচ্ছে না।
গরমের চোখ রাঙানির জেরে গত কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মাবকাশের বাইরেও স্কুলে বাড়তি ছুটি দিতে হচ্ছে। গত বছর ৯ মে থেকে আপৎকালীন ছুটি দিতে হয়েছিল। এ বার এক মাস আগেই তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বছর এপ্রিলের গোড়া থেকেই গরম অসহনীয় এবং চরিত্রও বদলেছে। দক্ষিণবঙ্গের চেনা ঘামে ভেজা গরমের জায়গায় পশ্চিমী শুখা দাবদাহ। বৃহস্পতিবারই কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। এ দিন অবশ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি) ছুঁয়েই থেমেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ঝাড়খণ্ড থেকে এ রাজ্যে গরম হাওয়া ঢুকছে। বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় সরে যাওয়ায় গোটা রাজ্যেই শুকনো গরম মালুম হচ্ছে। দিন কয়েক এমন চলবে। ‘‘গরম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রস্তায় বেরোতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,’’ বলছেন গোকুলবাবু। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, বাঁকুড়ায় সোমবার ফের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকতে পারে। আসানসোল-দুর্গাপুরেও তাপমাত্রা একই রকম হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রতি বুথে ওআরএস, মেডিক্যাল কিট রাখছে নির্বাচন কমিশনও।
তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় ১ এপ্রিল চাহিদা ছিল ৫৫০০ মেগাওয়াট। দিন কয়েকের মধ্যেই তা ৫৮০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। সিইএসসি এলাকায় ৮ এপ্রিল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৮৫১ মেগাওয়াট।
এই গরমের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে ঝড়বৃষ্টিই ভরসা। এ দিন বিকেলে রেডার চিত্রে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায় খণ্ড খণ্ড মেঘ তৈরি হতে দেখেন আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই মেঘ শক্তি বাড়িয়ে বর্ধমানও পেরোতে পারেনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy