Advertisement
১৮ মে ২০২৪

নিম্নচাপ অক্ষরেখায় জাঁকিয়ে বর্ষণ শহরে, তুলনায় কম দূরের জেলায়

কিন্তু এই ভারী বর্ষণের সূত্রে মহানগর আর রাজ্যেরই দূর মফস্‌সলের মধ্যে একটা সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। কেননা সোমবার থেকে কলকাতা এবং তার আশেপাশে যে-বৃষ্টিটা হয়ে চলেছে, দূরের জেলাগুলিতে তা হচ্ছে না।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৪:২২
Share: Save:

কোনও ঘূর্ণিঝড় বা অতিগভীর নিম্নচাপ নয়। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত থাকা একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাই সোমবার ১১৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি নামাল দমদমে। আলিপুরে ১০৭.৩ মিলিমিটার। ওই নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে সোমবার সারা রাত কোথাও টিপটিপ করে, কোথাও বা বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝমঝমে বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের পরে ফের নামে বৃষ্টি। নিম্নচাপ অক্ষরেখা আরও বলীয়ান হলে বৃষ্টি বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর।

কিন্তু এই ভারী বর্ষণের সূত্রে মহানগর আর রাজ্যেরই দূর মফস্‌সলের মধ্যে একটা সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। কেননা সোমবার থেকে কলকাতা এবং তার আশেপাশে যে-বৃষ্টিটা হয়ে চলেছে, দূরের জেলাগুলিতে তা হচ্ছে না। অথচ আমন চাষের এই ভরা মরসুমে সেখানেই এমন বর্ষণের দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।

প্রকৃতির এই বিপরীত আচরণ কেন? হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হয়, ঘূর্ণাবর্তেও বৃষ্টি হয়। কিন্তু নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে যে-বৃষ্টি হয়, তার সঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের বর্ষণের একটা মূলগত পার্থক্য আছে। “ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ থাকলে বর্ষার মেঘ হাওয়ার টানে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু অক্ষরেখার প্রভাবে তৈরি হওয়া মেঘগুলি কলকাতার আকাশ ছেড়ে নড়তেই পারেনি। ফলে এখানেই অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। দূরের জেলাগুলি এমন বৃষ্টি পায়নি,” বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস।

আরও পড়ুন: সিঙ্গুরে ফের বাধা ফ্রেট করিডরে

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, সোমবার সারা দেশের বৃষ্টিপাতের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে দমদম। দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিভারী বৃষ্টি হলেও দমদম, কলকাতা অন্য সব জায়গার থেকে এগিয়ে। আলিপুর হাওয়া অফিসের তথ্য অবশ্য বলছে, জুলাইয়ে এমন ভারী বর্ষণ বিরল নয়। ২০১৫ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় ১৪৩.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ১৯০৫ সালের ২৮ জুলাই কলকাতায় ১৮৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এখনও পর্যন্ত সেটাই রেকর্ড।

দেরি করে এসে বর্ষা প্রথম দিকে বেশ কিছু দিন ঝিমিয়ে ছিল। তার পরে হঠাৎ এমন অতিবৃষ্টি কেন?

আবহবিদদের বক্তব্য, খেপে খেপে বৃষ্টিই বর্ষার স্বাভাবিক ছন্দ। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টিপাতের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে। কিন্তু ইদানীং সেই স্বাভাবিকতা ব্যাহত হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বেশ কয়েক বছর ধরেই বদলে যাচ্ছে বৃষ্টির চেনা ধরনটা। অর্থাৎ বর্ষাকাল জুড়ে একটা নির্দিষ্ট ছন্দে বৃষ্টি হওয়ার বদলে কয়েক দিন অতিবৃষ্টি হবে। তার পরে আবার টানা বেশ কয়েক দিন বৃষ্টির দেখাই মিলবে না। একাধিক আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থার রিপোর্টে বর্ষণের এই প্রবণতা বদলের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মৌসম ভবনের আবহবিদেরা জানিয়েছেন।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এ দিন উত্তরপ্রদেশ ও লাগোয়া বিহারের উপরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। নিম্নচাপ অক্ষরেখাটির এক প্রান্ত তার সঙ্গে জুড়ে আছে এবং তার অন্য প্রান্ত রয়েছে বঙ্গোপসাগরের উপরে। তার ফলে আগামী কয়েক দিন কলকাতা-সহ সারা দক্ষিণবঙ্গেই বৃষ্টি হবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE