হাসিমুখে। রবিবার ময়দানে দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
পৌষের প্রথম তিন সপ্তাহ জুড়ে তার ব্যাটে শুধুই ব্যর্থতা। তবে কোণঠাসা হতে হতে শেষ-পৌষে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে শীত। এ বার তার পাশে দাঁড়াচ্ছে হিমালয়ের তীব্র তুষারপাত। সেই তুষার-সৌজন্যে গঙ্গাসাগর মেলা এ বার বেশ শীতের আবহেই কাটবে বলে মনে করছে হাওয়া অফিস।
চলতি মরসুমে কখনও মোক্ষম ঘা মেরে ঠান্ডাকে দমিয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়। কখনও বা তার দিকে সাহায্যের বৃষ্টি-হাত বাড়িয়ে দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। তবে এ বার শীতের ব্যাটে রানের খরা কাটবে বলেই আশা দিচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শীত-পথের যাবতীয় বাধা ঠেলে সরিয়ে দেবে কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড আর হিমাচল প্রদেশের জোরদার বরফই।
হিমালয়ে প্রবল তুষারপাতের জেরেই জব্বর শীত পড়ে বাংলায়। কিন্তু এ বার হাপিত্যেশ করে থেকেও এখনও তার সেই দাপটের ছোঁয়া পায়নি শীত-প্রত্যাশী বাঙালি। সংক্রান্তির মুখে এসে আশা জাগাচ্ছে শীত। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, হিমাচলে তুষারপাত এতটাই বেশি হচ্ছে যে, সেখানে দৃশ্যমানতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পুরু বরফে ঢেকে গিয়েছে রাস্তাঘাট। অগম্য হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। সেই সঙ্গে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস।
পটভূমি প্রস্তুত। আবহবিদদের আশা, হিমবন্তের কনকনে হাওয়া উত্তর ও মধ্য ভারত হয়ে নেমে আসবে পূর্ব ভারতে। এবং পথে অন্য কোনও বিভ্রাট না-হলে সেই হাওয়া বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ঢুকে পড়তে পারে আগামী সপ্তাহেই। তাপমাত্রা গত তিন দিনে একটু একটু করে নামছে। পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে উত্তুরে বাতাসও। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কোঠায় নেমে এসেছে।
পৌষ-সংক্রান্তি আগামী শনিবার। গঙ্গাসাগরে স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। পিঠেপুলির আসর বসবে ঘরে ঘরে। আম-বাঙালির অভিজ্ঞতা, পৌষ-সংক্রান্তি এলেই কনকনে হাওয়ায় শরীরে কাঁপুনি ধরে। রাতের পারদ নেমে যায় স্বাভাবিকের অনেকটাই নীচে। কিন্তু এ বছর শীতের যা মতিগতি, তাতে পৌষ-সংক্রান্তিতেও শীত মিলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কয়েক দিন আগেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন-চার ধাপ উপরে ঘোরাফেরা করছিল। তবে কয়েক দিন ধরে সেই পরিস্থিতির যে বদল ঘটে চলেছে, আমজনতাই সেটা বুঝতে পারছেন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই পারদ স্বাভাবিকের নীচে নামতে শুরু হবে। জোরালো শীতও মিলবে কয়েক দিন।
কতটা নামতে পারে তাপমাত্রা?
আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ, যে-ভাবে আবহাওয়ার মতি বদলাচ্ছে, তাতে পৌষ-সংক্রান্তিতে কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করবে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির কোথাও কোথাও ১০ ডিগ্রির নীচেও নেমে যেতে পারে পারদ।
কী এমন হল যে, হঠাৎই ‘সুবোধ বালক’ হয়ে উঠতে চলেছে শীত?
এর জবাবটা উত্তর ভারতের পাহাড়েই লুকোনো আছে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। কাশ্মীর, হিমাচলে যে-তীব্র তুষারপাত হচ্ছে, তাতে মূল অনুঘটকের কাজ করছে জোরালো পশ্চিমি ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া)। ওই পশ্চিমি ঝঞ্ঝা উত্তর ভারত, মধ্যপ্রদেশ পেরিয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়েছে। আর পূর্ব ভারতের উপর দিয়ে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বয়ে চলে যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে আকাশ। তাই হিমাচলের পাহাড় থেকে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ার রাস্তা আপাতত খোলা। সেই নিষ্কণ্টক পথ দিয়েই তীব্র হাওয়া উত্তুরে হাওয়া বয়ে আসবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে।
আসর জমাবে শীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy