Advertisement
১৮ মে ২০২৪

খালাসি অধরা, পুলিশি তদন্তে নানা বিভ্রান্তি

ট্রাক চালক ধরা পড়লেও পোলবা-কাণ্ডে বিভ্রান্তি বাড়ছে। বন্ধু জয়ন্তী সোরেনকে বাঁচাতে গিয়ে জখম পূজা হাঁসদা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা যা দাবি করছেন, তার সঙ্গে সহমত হচ্ছে না পুলিশের একাংশ। ফলে, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জয়ন্তীর মৃত্যু নিয়ে দু’পক্ষের টানাপড়েন অব্যাহত।

ধৃত মিনি ট্রাক চালক। — নিজস্ব চিত্র

ধৃত মিনি ট্রাক চালক। — নিজস্ব চিত্র

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
পোলবা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৮:৫৫
Share: Save:

ট্রাক চালক ধরা পড়লেও পোলবা-কাণ্ডে বিভ্রান্তি বাড়ছে।

বন্ধু জয়ন্তী সোরেনকে বাঁচাতে গিয়ে জখম পূজা হাঁসদা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা যা দাবি করছেন, তার সঙ্গে সহমত হচ্ছে না পুলিশের একাংশ। ফলে, ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জয়ন্তীর মৃত্যু নিয়ে দু’পক্ষের টানাপড়েন অব্যাহত।

শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ পোলবার কামদেবপুরের লজেন্স কারখানার কর্মী জয়ন্তী এবং পূজা বাড়ি ফেরার জন্য দিল্লি রোড ধরে হেঁটে অটো ধরতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় কামদেবপুর মোড়ে ধীর গতিতে একটি মিনি ট্রাক তাঁদের পাশে আসে এবং খালাসি জয়ন্তীর হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। বন্ধুকে বাঁচাতে জয়ন্তীর অন্য হাত ধরে টানতে থাকেন পূজা। এই টানাহ্যাঁচড়ায় দু’জনেই পড়ে যান। ট্রাকটির পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে জয়ন্তী ঘটনাস্থলেই মারা যান। জখম হন পূজা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও জানানো হয়। শনিবার রাতে পুলিশ ট্রাক-চালককে গ্রেফতার করে।

কিন্তু কোথায় গেল খালাসি? রবিবার রাত পর্যন্ত তার অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিত নন তদন্তকারীদের সকলে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ‘‘ওই ট্রাকে চালক ছাড়া আর কেউ ছিল না। এখনও পর্যন্ত তদন্তে এমন তথ্যই মিলছে।’’ কিন্তু গাড়ি চালানোর সময়ে ডান দিকে স্টিয়ারিংয়ে এক হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে ট্রাকের বাঁ দিক ঘেঁষে চলা কোনও তরুণীকে ধরে গাড়িতে তোলার চেষ্টা কী ভাবে করা সম্ভব, সে প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তদন্তকারীরা। এমনকী, ট্রাকটি ওই এলাকায় কী ভাবে এসেছিল, মেলেনি সেই উত্তরও।

অথচ, কামদেবপুরে ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ট্রাকটি জয়ন্তীদের লজেন্স কারখানায় মাল সরবরাহ করত। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই গাড়িটি জয়ন্তী ও পূজার পিছু নিয়েছিল। এ ব্যাপারে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও তথ্য মিলেছে কি না, সে প্রশ্নেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন তদন্তকারীরা। কারখানা কর্তৃপক্ষও রবিবার সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের চায়ের দোকান রয়েছে কামদেবপুর মোড়ে। তিনি জানান, সে দিন ওই সময়ে দোকানে খদ্দের না থাকায় টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ মেয়েদের চেঁচামেচি শুনে বাইরে গিয়ে দেখেন ওই কাণ্ড। তিনি বলেন, ‘‘চলন্ত ট্রাকটির বাঁ দিক থেকে এক জন একটা মেয়ের হাত টানছিল। তখনই অন্যদের ডাকি। আমরা যেতেই গাড়ির দু’দিকের দরজা খুলে দু’জন দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে আমবাগানে মিলিয়ে যায়। চাকার নীচে আটকে থাকা মেয়েটাকে আমরা বের করি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ গল্প সাজাতে যা খুশি বলছে। নিজের চোখকে কী করে অস্বীকার করব?’’ একই সুরে জয়ন্তীর পড়শি, চুঁচুড়ার সিঙ্গিবাগানের বাসিন্দা কার্তিক মহান্তিরও অভিযোগ, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই নানা কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’’

হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী অবশ্য জানিয়েছেন, জেলা পুলিশের তিনটি দল কাজ করছে। তদন্তে সব দিক খোলা রাখা হচ্ছে। ধৃত চালককে রবিবার চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হয়। তাকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের অফিসে বিক্ষোভ দেখানো হয়। দুপুরে দিল্লি রোড অবরোধ করে আদিবাসী সংগঠন ‘স্বতন্ত্র মহিলা সমিতি’র সদস্যারা। ওই লজেন্স কারখানার গেটেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। বিজেপি-র আইন়জীবী নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘পুলিশকর্তাদের নানা প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট, পুলিশ অন্ধকারে ঢিল মারছে।’’

জয়ন্তীর পরিবারের লোকজন তো বটেই, কামদেবপুরের লোকেরাও চান, জট কাটুক। সত্য সামনে আসুক। দোষীদের শাস্তি হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE