এ রাজ্যের আলু চাষিদের সঙ্কট কাটাতেও পরামর্শ দিল হাইকোর্ট। আলু চাষিদের সমস্যা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে শুক্রবার প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বলেন— পঞ্জাবের মতো চুক্তি চাষ করলে এ রাজ্যেও আলু চাষিরা লাভবান হতে পারেন। এ ছাড়া এই সঙ্কট কাটাতে বৈজ্ঞানিক পরিকাঠামো ও বিজ্ঞানসম্মত চাষ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এ দিন শুনানির শুরুতেই রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্তর দাবি, এই মুহূর্তে রাজ্যে আলু চাষিদের কোনও সমস্যা নেই। সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তা শুনে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, ‘‘এ রাজ্যের আলু চাষিরা এখন প্রতি কিলোগ্রামের দাম পাচ্ছেন সাড়ে পাঁচ টাকা। কিন্তু পাশের রাজ্য ওড়িশায় সেই দাম ছ’টাকা!’’ এর পরেই অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আলু চাষিদের সমস্যা নেই, এটা ঠিক নয়। সরকার চাষিদের সমস্যা মেটাতে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা জানান। সরকার কী সরাসরি চাষিদের থেকে আলু কিনছে, না ফড়েদের থেকে কিনছে?’’
অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রধান বিচারপতিকে জানান, সরকার রাজ্যের আটটি জেলার আলু চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ৫০ হাজার টন আলু কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। প্রতি টন আলুর দাম দেওয়া হয়েছে, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। লক্ষ্মী গুপ্ত ডিভিশন বেঞ্চকে এ-ও জানান, ১২ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চাষিদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৩২ টন আলু কিনেছে রাজ্য সরকার। তা জেনে বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত পূরণ করার চেষ্টা করুন।’’ প্রধান বিচারপতি চেল্লুর লক্ষ্মীবাবুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘আলু চাষিরা যাতে পঞ্জাবের মতো বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চাষ করতে পারেন, সে দিকে নজর দিক সরকার। সঙ্গে দরকার বিজ্ঞানসম্মত পরিকাঠামো।’’ প্রধান বিচারপতি জানান, কী দামে উৎপাদিত ফসল কেনা হবে, বহুজাতিক সংস্থাগুলি পঞ্জাবের চাষিদের সঙ্গে আগেই তা নিয়ে চুক্তি করে নেয়। তারা যে ধরনের বীজ ব্যবহার করতে বলে, যে পদ্ধতিতে চাষ করতে বলে, সেই পদ্ধতি মেনে পঞ্জাবের চাষিরা চাষ করেন। এতে ফসলের গুনগত মানও ঠিক থাকে। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানান, আলু চাষিদের সঙ্কট কাটাতে রাজ্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে, আলুর মজুতের উপর নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া, আন্তঃরাজ্য ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে কুইন্ট্যাল প্রতি ৫০ টাকা পরিবহণ ভর্তুকি। রফতানিকারীদের জন্য ওই ভর্তুকি কুইন্ট্যাল প্রতি ১০০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। তা জেনে প্রধান বিচারপতি লক্ষ্মীবাবুকে নির্দেশ দেন, সরকার যা যা ব্যবস্থা নিয়েছে, তা লিখিত আকারে জনস্বার্থ-মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিন। আলু চাষিদের সঙ্কট কাটাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে গুলি ওই আইনজীবী আদালতে জমা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া ব্যবস্থা জানার পরে আরও কিছু পদক্ষেপ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে ওই আইনজীবীকে ২৭ এপ্রিল আদালতে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।