Advertisement
E-Paper

চুপচাপ ভিতরে যা, চোখরাঙানির কাটোয়া লোকালে ভয়ের যাত্রা

হাঁসফাঁস গরম। একটু স্বস্তির খোঁজে ট্রেনের ভিতর থেকে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যান্ডেলে ট্রেন দাঁড়াতেই দু’দ্দাড় করে উঠে পড়ল ওরা ক’জন। তার পরে যা ঘটল, সোমবার তার জন্যে তৈরি ছিলাম না।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৩

হাঁসফাঁস গরম। একটু স্বস্তির খোঁজে ট্রেনের ভিতর থেকে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। ব্যান্ডেলে ট্রেন দাঁড়াতেই দু’দ্দাড় করে উঠে পড়ল ওরা ক’জন। তার পরে যা ঘটল, সোমবার তার জন্যে তৈরি ছিলাম না।

কুড়ি-পঁচিশ বছরের ওই যুবকরা হিন্দিভাষী। উঠেই উল্টো দিকে দরজার কাছে, মানে যেখানে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, সেখানে এসে এক জন দাদাগিরির ভঙ্গিতে বলল, ‘‘ভিতরে যাও, এখানে আমরা দাঁড়াব।’’ দু’কানে মোবাইলের হেডফোন, মুখে গুটখা, বাঁ কানে দুল এবং কাঁধে ব্যাগ। নরম করেই বললাম, ‘‘অনেক ক্ষণ ভিতরে ছিলাম। গরমে কষ্ট হচ্ছে। একটু দাঁড়াই, পরে আবার ভিতরে যাব।’’ কানের দুল-এর মেজাজ এতেই তিরিক্ষি হয়ে গেল। এ বার ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’। গলার স্বর চড়িয়ে ভাঙা বাংলায় বলল, ‘‘এই চল, ভিতরে যা। এখানে দাঁড়াবি না।’’

কথা না বাড়িয়ে কিছুটা সরে গেলাম। তাতেও হল না! তেড়ে এল কানে-দুল, ‘‘বললাম না ভিতরে যেতে!’’ মৃদু প্রতিবাদের স্বরে প্রশ্ন করলাম, ‘‘কেন যাব? আমি তো আর কারও জায়গায় দাঁড়াইনি।’’ যেন আগুনে ঘি পড়ল। কানে দুল-এর সঙ্গীদের মধ্যে তিন জন এসে গালাগালি দিতে দিতে আমার হাত ধরে টানতে থাকল। আঙুল উঁচিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘‘চুপচাপ ভিতরে যা।’’ কথা বা গায়ের জোর দেখানোর পরিস্থিতি ছিল না। স্বভাবেও নেই। তাই সরে গেলাম।

এ দিন সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ সমুদ্রগড় থেকে হাওড়ামুখী কাটোয়া লোকালে উঠেছিলাম। সপ্তাহের প্রথম দিন ভিড় একটু বেশিই ছিল। বিশেষ করে প্রথম কামরায়। তাই ভিতরে ঢুকতে পারিনি। সিটের সারির পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রায় দেড় ঘণ্টা ওই ভাবে দাঁড়িয়ে অবস্থা কাহিল। সাড়ে আটটা নাগাদ ট্রেন ব্যান্ডেল স্টেশনে থামলে ভিড় কিছুটা কমল। একটু স্বস্তি পেতে তখনই দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তার পরেই ওই ঘটনা।

আমাকে ধাক্কা দিয়েই শেষ নয়। তাদের অভব্যতার পরিধি ক্রমে বাড়ল। চার জন ট্রেনের মেঝেয় বসে মগ্ন হল তাস খেলায়। সঙ্গে সিগারেট। আর বাকিরা দরজায় দাঁড়িয়ে প্ল্যাটফর্ম বা অন্য ট্রেনে থাকা মহিলা যাত্রীদের উদ্দেশে অশ্লীল কথা ও অঙ্গভঙ্গি করতে থাকল। কামরায় যাত্রী ভর্তি। কিন্তু সবাই সিঁটিয়ে, কেউ প্রতিবাদ করছেন না।

ট্রেন চন্দননগর ছাড়াচ্ছে। এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপে ঘটনার কথা জানালাম পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রকে। ওই এসএমএস-কে অভিযোগ হিসাবে গণ্য করার অনুরোধও করলাম। কামরায় রেলের কোনও ফোন নম্বর দেখতে পাইনি যেখানে অভিযোগ জানানো যায়। এ দিকের ট্রেনে ও সব লেখা থাকে না বলেই জানালেন নিত্যযাত্রীরা। সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাদে রবিবাবুর সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় আমি জানাতে পারলাম। সাধারণ যাত্রী কী করবেন?

তবে অভিযোগ জানানোই সার।

সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ট্রেন যখন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছল, ভিড়ের ঠেলায় অনেকটাই ভিতরে ঢুকে গিয়েছি। প্ল্যাটফর্মে নামার আগেই অবশ্য উধাও কানে-দুল ও তার সঙ্গীসাথীরা। এত কিছুর পরেও কিছুই করতে পারলাম না বলে খারাপ লাগছিল। সকালের সেই এসএমএসের প্রতিক্রিয়া মিলল সন্ধেবেলায়। তা-ও পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক যে নিজে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা নয়। নাছোড় আমি বাইশ বার ফোন করেও থামিনি! তেইশ বারে তাঁর কণ্ঠ শোনা গেল। বললেন, ‘‘মিটিংয়ে ছিলাম, ফোন ধরতে পারিনি।’’ তাঁর উপদেশ, ‘‘ই-মেল করে অভিযোগ জানাতে পারেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’’

পরে সব শুনে রবিবাবুর জবাব, ‘‘১৮২-তে ফোন করতে পারতেন তো!’’ কিন্তু সেটা জানা যাবে কী করে? দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ট্রেনের কামরায় অভিযোগ জানানোর জন্য টেলিফোন নম্বর লেখা থাকে। এখানেও তো তা থাকতে পারে। চটে গেলেন রবিবাবু, ‘‘তুলনা করবেন না। আমরা এ নিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। কেউ যদি না জানেন, তা হলে কী করব!’’

Hooliganism Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy