Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Manik Bhattacharya

৫৩০টি কলেজ থেকে ২ কোটি ৬৫ লাখ! কোন ফিকিরে টাকা তুলেছিলেন মানিক? জানুন সন্ধান

পলাশিপাড়ার তৃণমূলের মানিক তাঁর ছেলের নামেও বিপুল টাকা তুলেছিলেন বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি। যে সব কলেজ থেকে টাকা তোলা হয়েছে তারাও তুলছে অভিযোগ।

কলেজ পিছু ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ।

কলেজ পিছু ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৩১
Share: Save:

তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য পদের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ এনেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে জানিয়েছে, মানিক-পুত্র শৌভিকের কনসালটেন্সি ফার্মের নামে ওই টাকা তোলা হয়েছে। রাজ্যে এমন ৫৩০টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলিতে বি.ইডি, ডি.ইএল.ইডি-র মতো কোর্স করানো হয়। সেই সব সংস্থার প্রতিটি থেকেই ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনই এক সংস্থার দাবি, ২০১৮ সালে তাদের থেকে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ নেওয়া হয়েছিল। তাতে টাকার পরিমাণ লিখতে বলা হলেও তা কোন সংস্থার নামে জানানো হয়নি। পরে জানা যায়, ওই চেক মারফত টাকা জমা পড়ে ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি সার্ভিসেস’ নামে একটি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

যে সব কলেজ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, তারই একটির নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তা বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে জানান, ২০১৮ সালের পুজোর সময় ওই টাকা নেওয়া হয়। মানিকের অফিস থেকেই ফোনে টাকা চাওয়া হয়। বলা হয়, অর্থপ্রাপকের নাম না লিখে ৫০ হাজার টাকার চেক দিতে হবে। সেই সময় এই ধরনের অন্য কলেজের থেকেও টাকা চাওয়া হয় বলে ওই কলেজকর্তা জানান। তিনি বলেন, ‘‘টাকা না দিলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল। জানতে পারি, একই কথা সব কলেজকেই বলা হয়। বাকিরা কবে দিয়েছিলেন জানা নেই। তবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের পক্ষে আমরা নির্দেশ মতো চেক পাঠাই। পরে দেখা যায়, ২ অক্টোবর সেই টাকা ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি’র নামে ‘ডেবিট’ হয়েছে।’’

ইডি সূত্রে খবর, এমন অনেক কলেজেরই নথি তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। ইডি আদালতে জনিয়েছে, মানিকের ছেলের ওই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার হদিস মিলেছে। মনে করা হচ্ছে ওই অর্থ ৫৩০টি কলেজ থেকে নেওয়া টাকারই অংশ। পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক নিজের ছেলের সংস্থার সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থার চুক্তি করে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। তবে টাকা নিলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনও কাজ করেনি ওই সংস্থা। কলেজগুলিকে টাকাও ফেরত দেয়নি। ইডির দাবি, এ সবই হয়েছিল মানিক তাঁর নিজের নামের প্রভাব ও পদের প্রতিপত্তির ‘অপব্যবহার’ করায়।

ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মানিকের ছেলে শৌভিক আবার ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি’র সঙ্গে নিজের আর একটি সংস্থার চুক্তি করেন। এর পরে সেই টাকা নিজের কাছে নিয়ে নেন। ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি সার্ভিসেস’ ঠিক কী কাজ করে, তা নিয়েও নানা ধন্দ তৈরি হয়েছে। সংস্থার যে ওয়েবসাইট রয়েছে, তাতেও বিশেষ কিছু উল্লেখ নেই। নতুন হলেও সংস্থাটি এক দশক ধরে বিভিন্ন সংস্থাকে পরিষেবা দিয়ে আসছে। তবে কী ধরনের পরিষেবা তার উল্লেখ নেই। ঠিকানা হিসাবে শুধু ‘যাদবপুর, কলকাতা ৩২’ বলে উল্লেখ রয়েছে।

ওই সংস্থার অধীনে তিনটি কমিটিরও উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে ‘অ্যাডভাইসরি কমিটি’-র মাথায় এক প্রাক্তন আমলারও নাম রয়েছে। ‘এডুকেশন কমিটি’-র মাথায় একটি বেসরকারি কলেজের প্রাক্তন উপাচার্যের নাম এবং ‘টেকনিক্যাল কমিটি’-র মাথায় এক তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের নাম রয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, অনতিবিলম্বে ওই তিন ব্যক্তিকেও জেরা করা হতে পারে।

ওই সংস্থার যে ফোন নম্বর তাদের ওয়েবসাইটে রয়েছে, সেখানে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রতি বারই এক মহিলা ফোন ধরেন এবং বলেন, ‘‘তং মত কিজিয়ে!’’ অর্থাৎ, বিরক্ত করবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manik Bhattacharya TMC MLA TET Scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE