Advertisement
E-Paper

সব পকসো মামলা থেকে হাওড়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলিকে অপসারণের নির্দেশ

হাওড়া কোর্টের বিচারক মনে করেন, বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের তরফে গাফিলতি থাকছে, তা হলে তিনি আইনানুগ পদক্ষেপ করতে পারবেন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০১
Share
Save

শিশু পাচার এবং যৌন নির্যাতনের একটি মামলা থেকে হাওড়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলিকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, হাওড়ার জেলা সরকারি কৌঁসুলিকে নিজেকে এই মামলা লড়তে হবে এবং বিচার যাতে ঠিক মতো হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি হাওড়া কোর্টের বিচারক মনে করেন, বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের তরফে গাফিলতি থাকছে, তা হলে তিনি আইনানুগ পদক্ষেপ করতে পারবেন। অপসারিত সরকারি কৌঁসুলি যাতে কোনও পকসো মামলাতেই না থাকেন, তা-ও বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

২০২১ সালে হাওড়ার একটি হোম থেকে শিশু পাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় হাওড়ার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মিনতি অধিকারীর ছেলে, বৌমা-সহ একাধিক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে তিন জন সম্প্রতি জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। এই মামলাতেই সরকারি কৌঁসুলির গাফিলতি চোখে পড়ে ডিভিশন বেঞ্চের। দেখা যায়, হাওড়ার জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক বসর আলি সাক্ষী দিতে চাননি। তাঁকে সাক্ষীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরেই ওই কৌঁসুলির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের লিগাল রিমামব্রান্সারের (এলআর) রিপোর্ট চেয়েছিল কোর্ট। বসর আলি কেন সাক্ষী দিতে চাইছেন না, সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও তদন্তকারীদের নির্দেশ দিয়েছিল কোর্ট।

এ দিন কোর্টে এলআর-এর রিপোর্ট জমা পড়েনি। তবে এলআর ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য নিজে আদালতে ছিলেন। রাজ্য জানায়, এলআর এ দিনই কোর্টের নির্দেশ পেয়েছেন। ইন্দ্রনীল জানান, তিনি হাওড়ার জেলা সরকারি কৌঁসুলির সঙ্গে কথা বলেছেন। ডিভিশন বেঞ্চ এলআর-কে জানায়, সংশ্লিষ্ট সরকারি কৌঁসুলিকে যেন পকসো মামলা থেকে সরিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সাক্ষী দিতে ইচ্ছুক হলেও সরকারি কৌঁসুলি কেন বেঁকে বসেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সাক্ষী পুলিশকে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলছেন আর সরকারি কৌঁসুলি তাঁর নাম তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন!

প্রসঙ্গত, হাওড়ার সালকিয়ার শ্রীরাম ঢ্যাং রোডে তস্য গলির মধ্যে একটি তেতলা বাড়িতে ২০১৬ সালে গড়ে উঠেছিল রাজ্য সরকারের ‘করুণা’ নামে একটি হোম। মূলত অনাথ ও সদ্যোজাত অনাথদের আইনানুগ ভাবে দত্তক দেওয়ার কেন্দ্র ছিল এটি। হোমের কর্ণধার ছিলেন মিনতি অধিকারীর ছেলে সুমিত অধিকারী ও পুত্রবধূ গীতশ্রী অধিকারী। ২০২১ সালে এক দম্পতি সেখান থেকে এক শিশুকন্যাকে দত্তক নেওয়ার পরে তার থেকে জানতে পারেন, ওই সমিতির আড়ালে শিশু বিক্রি, শিশু পাচার ও শিশুদের উপরে যৌন নিপীড়ন চলছে। ওই দম্পতি সরাসরি হাওড়ার নগরপালের কাছে অভিযোগ জানান।

২০২১-এর ১৯ নভেম্বর রাতে হোমে তল্লাশি চালায় পুলিশ। উদ্ধার হয় সদ্যোজাত-সহ আটটি শিশু। যাদের উপরে যৌন নিপীড়ন করার প্রমাণও মেলে। এর পরেই গীতশ্রী-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রাজ্য সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের এক উচ্চপদস্থ অফিসারও আছেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু হয়। এর দু’দিন পরেই মিনতির ছেলে সুমিতকেও পুলিশ ধরে। অভিযোগ, তিনি জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির সদস্য হয়ে ওই হোমে চলা শিশু-নির্যাতন ও বিক্রি চক্র আড়াল করতেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Howrah Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}