Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
temple

চর্মকারদের পুজোয় ‘না’, সরগরম গোঘাটের গ্রাম

ঠিক কাদের বিরুদ্ধে পুজোয় বাধা দানের অভিযোগ, গোলমালের আশঙ্কায় তা স্পষ্ট করতে চান না রুইদাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তবে, ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, উচ্চ বর্ণের মানুষদের আপত্তির কথা।

শালিঞ্চাগ্রামে ভুবনেশ্বর শিবমন্দির।

শালিঞ্চাগ্রামে ভুবনেশ্বর শিবমন্দির। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
গোঘাট শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪২
Share: Save:

তাঁরা ঢাক বাজালে আপত্তি নেই। পুজোর জন্য চাঁদা দিলে আপত্তি নেই। কিন্তু গ্রামের মন্দিরে পুজো দিতে গেলেই আপত্তি!

গোঘাট-১ ব্লকের শালিঞ্চা গ্রামে ২৫ ঘর রুইদাস (চর্মকার) সম্প্রদায়ের বাস। বংশানুক্রমে তাঁরা পুজো দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত, এমনটাই অভিযোগ। মঙ্গলবার ওই সম্প্রদায়ের মহিলারা নীলষষ্ঠী উপলক্ষে গ্রামের ভুবনেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখেন দরজা বন্ধ। পুরোহিত নেই। পুজোর ডালি মন্দিরের দরজার সামনে রেখে তাঁরা ফিরে আসেন।

এই ঘটনায় ফের একবার জাতপাত নিয়ে বিভেদের অভিযোগকে ঘিরে গ্রাম সরগরম হয়। অশান্তির আশঙ্কায় মন্দিরে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করে পুলিশ। বুধবারও মন্দিরের সামনে ওই পুজোর ডালা দেখা গিয়েছে।

ঠিক কাদের বিরুদ্ধে পুজোয় বাধা দানের অভিযোগ, গোলমালের আশঙ্কায় তা স্পষ্ট করতে চান না রুইদাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তবে, ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন, উচ্চ বর্ণের মানুষদের আপত্তির কথা। ওই সম্প্রদায়ের ডলি দাস বলেন, ‘‘আমরা মঙ্গলবার পুজো দিতে যাচ্ছি খবর পেয়ে সকাল সাতটাতেই পুরোহিত পুজো সেরে মন্দিরের দরজায় শিকল দিয়ে চলে যান। ডাকতে গিয়ে তাঁকে বাড়িতেও পাওয়া যায়নি।’’ ওই সম্প্রদায়ের পক্ষে দশরথ দাসের খেদ, “সব ক্ষেত্রে সমান চাঁদা দিলেও স্রেফ জাতে চর্মকার বলে আমাদের মন্দিরে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। এর বিহিত চেয়ে আমরা পুলিশ ও পঞ্চায়েতে বহুবার জানিয়েছি। কিন্তু কিছু হয়নি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শালিঞ্চায় দু’টি বারোয়ারি মন্দির রয়েছে। একটি ভুবনেশ্বর মন্দির, অন্যটি কালীমন্দির। অতীতে পুজো-পার্বণে দাসপাড়ার মানুষের সেখানে শুধু ছ’জোড়া ঢাক বাজাতেন। ১৯৮৫ সাল নাগাদ তাঁরা দাবি করেন, আর ঢাক বাজাবেন না, পুজোয় চাঁদা দেবেন। সেইমতো চাঁদা নেওয়া শুরু হলেও তাঁরা মন্দিরে উঠে কোনও দিন পুজো দিতে পারেননি।

 এ ভাবেই পড়ে রয়েছে পুজোর থালা।

এ ভাবেই পড়ে রয়েছে পুজোর থালা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

লক্ষ্মণ চক্রবর্তী নামে ভুবনেশ্বর মন্দিরের ওই পুরোহিত বলেন, ‘‘পুজোর সময় কেন এই সমস্যা, আমার মাথায় ঢোকে না। দু’পক্ষের সমস্যা মেটেনি বলেই আমি নিত্যপুজোটা সেরে চলে আসি।’’ গ্রাম কমিটির পক্ষে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “গ্রামে আমরা একসঙ্গেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকি। পুজো নিয়ে গ্রামগত সমস্যায় মিথ্যা জাতপাত জড়ানো হচ্ছে।” তবে সেই ‘গ্রামগত সমস্যা’ ঠিক কী, তা খোলসা করেননি সুব্রতবাবু।

জাতপাতের সমস্যার কথা পুলিশ প্রশাসনের অজানা নয়। বস্তুত, গত সোমবারই পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট রঘুবাটী পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রুইদাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। ওই দিনই পুলিশ দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে। দাসপাড়ার বাসিন্দারা পুজো দেবেন বলে জানিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও তাঁরা পুজো দিতে পারেননি।

পঞ্চায়েত প্রধান সুষমা সাঁতরা বলেন, “ওদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসেছি। সমাধান হয়নি।” বিডিও সুরশ্রী পাল বলেন, “লিখিত কোনও আভিযোগ পাইনি। ঘটনা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

temple Caste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE