Advertisement
০২ মে ২০২৪
Didir Suraksha Kavach

পঞ্চায়েতে জেতালে সব হবে, বিক্ষোভে জবাব দূত নির্মলের

নির্মলকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় দু’দফায়। সকাল থেকে দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে বাণীবন পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরছিলেন নির্মল।

ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে অসিত মজুমদারকে ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ

ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে অসিত মজুমদারকে ঘিরে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া, চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৩৬
Share: Save:

মহিলাদের প্রশ্ন ধেয়ে আসছিল একের পর এক।

গ্রামের রাস্তা হবে কবে? গরিব মানুষের আবাস যোজনায় নাম নেই কেন? জলসঙ্কট তো মিটল না!

শুক্রবার ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে দুই জেলায় বিক্ষোভের মুখে পড়লেন দুই বিধায়ক। হাওড়ার উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের বাণীবন পঞ্চায়েত এলাকায় পরপর ওই প্রশ্নের মুখে পড়ে বিধায়ক নির্মল মাজির জবাব, ‘‘দলকে পঞ্চায়েত ভোটে জেতান। তারপরে সব হবে।’’ গ্রামবাসীরা থ!

হুগলির চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের মালিকপাড়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়ে কোনও মতে পরিস্থিতি সামলান।

নির্মলকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় দু’দফায়। সকাল থেকে দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে বাণীবন পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরছিলেন নির্মল। প্রথমে তিনি যান একটি বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনে। সেখান থেকে বাণীবন পঞ্চায়েত অফিসে। ওই এলাকায় আগে থেকেই উন্নয়ন না-হওয়া নিয়ে পোস্টার পড়েছিল। সেই পোস্টার কারা মেরেছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। নির্মল সেই সব পোস্টার দেখেন। কিন্তু পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগোতেই বৃন্দাবনপুরের জঙ্গলবিলাস এলাকায় যে তাঁকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হবে, আশা করেনি দলের কর্মী-সমর্থকদের কেউই।

এখানে একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়ে কোনও কথা না বলে চলে যান নির্মল। এরপরে বৃন্দাবনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে ফেরার সময় তাঁর বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামের মহিলারা। রাস্তা-জল-উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে জেতালে সব হবে’’, নির্মল যে এমন কথা বলবেন, ভাবতেই পারছেন না গ্রামবাসীরা!

চম্পা ঘোড়া নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘বিধায়ক আসছেন শুনে সকাল থেকে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলাম। অনেক কিছু বলার ছিল। বিধায়ক তো কিছু সে ভাবে শুনলেই না। শুধু ভোটে জেতানোর কথা বললেন।’’ সুনন্দা মালিক এবং শ্যামলী মালিক নামে আরও দুই মহিলার ক্ষোভ, ‘‘ওঁর মুখে প্রতিবার এক কথা শুনি। কথামতো ভোট দিই। ভোটের পরে আর ওঁদের দেখা মেলে না।’’

সোলেমান মোল্লা নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘শুনছি, দিদির দূত গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন। এখানে তো দেখলাম, কয়েক জায়গায়নিজেদের লোকের কাছে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে বিধায়ক চলে গেলেন। সামনে পেলে এলাকার রাস্তাঘাট ঘুরিয়ে দেখাতাম। কৈফিয়ৎ চাইতাম, কবে রাস্তা হবে?’’

স্থানীয় বিজেপি নেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পরপর তিন বারের বিধায়ক উনি। কিন্তু বাণীবনে কোনও উন্নয়ন করেননি। তাই গ্রামবাসী বিধায়কের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। উনি শুনলে তো!’’

নির্মল অবশ্য বিক্ষোভের কথা মানতে চাননি। তাঁ দাবি, ‘‘গ্রামের মানুষের কথা শোনার জন্যই গ্রামে যাওয়া। মানুষ তাঁদের কথা বলেছেন। আমরা লিপিবদ্ধ করেছি। আগামী দিনে সেই সব কাজ করা হবে।’’

হুগলির দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের মালিকপাড়ায় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাড়ি বাড়ি জলের পাইপ লাইন পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু জল মেলে না। সমস্যার কথা আগে বিধায়ককে জানানো হলেও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। এ দিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বসতভিটেতে তাঁর মূর্তিতে মালা দিয়ে, তারপরে একটি কালীমন্দিরে পুজো দিয়ে মালিকপাড়ায় পৌঁছন অসিত। পিছনে ঢাক-ব্যান্ড বাজিয়ে আসছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। মিছিলে ছিল আদিবাসী নাচও।

কিন্তু ওই পাড়ায় ঢুকতেই ছন্দপতন! অসিতের পথ আটকান এলাকাবাসী। তাঁদের বেশির ভাগই মহিলা। কয়েকজন মহিলা বিধায়কের দিকে আঙুল উঁচিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘আর কতদিন জলের যন্ত্রণা সহ্য করব? আগেও আপনাকে জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।’’ স্মৃতিকণা চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘বছর কয়েক আগে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে পঞ্চায়েত বাড়িতে কল দিয়েছে। কিন্তু মাস ছয়েক পর থেকেই কল থেকে জল পড়া বন্ধ।’’ আর এক মহিলার খেদ, ‘‘বারবার জানিয়েও সমস্যা মিটছে না।’’ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সুনীল দাস ও অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এলাকার বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কথাও তুলে ধরেছিলেন অসিতের সামনে।

প্রথম দিকে অসিত বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় কোনওমতে এলাকা ছাড়েন তিনি। পরে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মানুষের সমস্যার কথা জানতেই আমাদের পাঠিয়েছেন। একটা জায়গায় ক্ষোভ রয়েছে। আমরা অবশ্যই ওই এলাকার সমস্যার সমাধান করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Didir Suraksha Kavach Uluberia Chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE