Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Indian drummers

Indian drummers: ভ্যাকসিন এখনও মেলেনি, দুশ্চিন্তায় ঢাকিরা

শ্যামবাজারের রুইদাসপাড়ার ৪২টি পরিবারের পুরুষরা প্রায় সকলেই ঢাক বাজিয়ে সংসার চালান।

ঢাক পরিষ্কার করছেন গোঘাটের শ্যামবাজারের এক ঢাকি।

ঢাক পরিষ্কার করছেন গোঘাটের শ্যামবাজারের এক ঢাকি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১৬
Share: Save:

এক মাস পরেই পুজো। ঢাকে কাঠি পড়ল বলে! কিন্তু বেসুরো শোনাচ্ছে গোঘাটের শ্যামবাজার গ্রামের ঢাকিদের গলা। কেননা, করোনার টিকা পাননি তাঁরা। ফলে, বায়না পেলেও ঢাক বাজাতে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

শ্যামবাজারের রুইদাসপাড়ার ৪২টি পরিবারের পুরুষরা প্রায় সকলেই ঢাক বাজিয়ে সংসার চালান। মহিলারা মাঠ বা গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। বিভিন্ন উৎসবে অন্যান্য জেলা বা কলকাতার পাশাপাশি দিল্লি, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, হায়দরাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকেও তাঁদের ডাক আসে। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিনেই ১০-১৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। এ ছাড়াও কালী, জগদ্ধাত্রী বা বিভিন্ন বারোয়ারি পুজো মিলিয়ে সংসার চলে যায়। এক দিনের অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে গড়ে মাথাপিছু দেড়-দু’হাজার হাজার টাকা আসে।

গত বছর করোনা আবহে বায়না মেলেনি। এ বার সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। বিভিন্ন পুজো কমিটির তরফে বায়না মিলছে। গত বছর রোজগার মাটি হওয়ার পরে এ বার পুজোয় ডাক পেয়ে তাঁরা আশার আলো দেখলেও ভ্যাকসিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না, তা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকিরা।

প্রশাসনের তরফে অবশ্য ঢাকিদের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে। বিডিও (গোঘাট-২ ব্লক) দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘ওঁদের ভ্যাকসিনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।’’

বছর চৌষট্টির কার্তিক রুইদাস গত কয়েক বছর কলকাতার গরানহাটায় দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজিয়েছেন। গত বছর করোনার জন্য যাওয়া হয়নি। এ বার ফের ডাক এসেছে সেখান থেকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ভ্যাকসিনের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েতে থেকে তালিকা পাঠাবে। পঞ্চায়েতে গেলে কাদের ভ্যাকসিন আগে হবে সেই গল্প বলে গা করছে না। ভ্যাকসিন না হলে ঢাক বাজাতে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’’ উত্তম রুইদাস, জয়দেব রুইদাস, মন্মথ রুইদাস, লক্ষ্মীচরণ রুইদাস, বিশ্বনাথ রুইদাসদেরও একই চিন্তা।

বছর ষাটের বিশ্বনাথ রুইদাসের ক্ষোভ, ‘‘বায়না পেয়েও ভ্যাকসিনের জন্য যেতে না পারলে এ বারেও আমাদের আধপেটা খেয়েই থাকতে হবে। রেশনের চাল বাদে লোকশিল্পী হিসাবে সরকারি কোনও সাহায্য আমরা পাইনি।’’ তিনি জানান, গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার জমি নেই। সংসারের হাল ধরতে ছেলেদের অষ্টম-নবম শ্রেণিতেই স্কুল ছাড়িয়ে ঢাক বাজাতে পাঠাতে হয়। মেয়েদের কিছুটা পড়িয়ে যেন তেন প্রকারে বিয়ে দেওয়াই রীতি।

এলাকার শ’দুয়েক বাসিন্দার মধ্যে হাতেগোনা কয়েক জন ভ্যাকসিন পেয়েছেন। যেমন, সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করায় থানার মাধ্যমে ভ্যাকসিন পেয়েছেন বাসুদেব রুইদাস। জয়রামবাটী মিশনে ঢাক বাজাবেন মহাদেব রুইদাস, তাঁর ছেলে সন্দীপ এবং দুই প্রতিবেশী দিলীপ ও খোকন রুইদাস। মিশন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ মঙ্গলবার তাঁরা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় পেয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian drummers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE