‘রায়বাঘিনি’ রানি ভবশঙ্করীর স্মরণে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে মেলা হয়ে গেল উদয়নারায়ণপুরের গড় ভবানীপুরে। নাম— ‘রায়বাঘিনি রানি ভবশঙ্করী স্মৃতি মেলা’। শেষ হল বুধবার, পয়লা জানুয়ারি। হরেক খাবার-দাবার, খেলনা, গৃহস্থালির জিনিসপত্রের বিকিকিনির আসর বসেছিল। ছিল নাগরদোলা-সহ বিনোদনের নানা আয়োজন। চলল সংস্কৃতি চর্চা। রানি ভবশঙ্করীর বীরগাথার কাহিনি এখনও উদয়নারায়ণপুরের বহু মানুষের মুখে ফেরে। জায়গাটিকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে দেওয়ার জন্য শুরু হয়েছে উদ্যোগ।
ভবশঙ্করী ছিলেন মধ্যযুগে ভুরসুটের রানি। ভুরসুটের ব্যাপ্তি ছিল হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। রাজধানী ছিল গড় ভবানীপুরে। রাজা রুদ্রনারায়ণের অকালমৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী ভবশঙ্করী রাজত্ব চালানোর দায়িত্ব পান। বাবা দীননাথ চৌধুরী ছিলেন ভুরসুটের রাজার সেনাপতি। মেয়েকে তিনি ঘোড়ায় চড়া, তরবারি চালানো, তিরন্দাজির প্রশিক্ষণ দেন। ফলে, রাজত্ব চালাতে ভবশঙ্করীর সমস্যা হয়নি। সেই সময় মুঘল ও পাঠানদের মধ্যে লড়াই চলছে। মুঘলদের তাড়া খেয়ে পাঠানরা এগিয়ে আসছে বাংলার দিকে। পাঠান সেনাপতি ওসমান খান ভুরসুট দখল করতে এলে ভবশঙ্করী প্রতিহত করেন এবং তাঁকে তাড়িয়ে দেন। সেই খবর পেয়ে মুঘল সম্রাট আকবর দূত পাঠিয়ে ভবশঙ্করীকে সম্মাননা জানান এবং ‘রায়বাঘিনি’ খেতাব দেন। ভুরসুটের রাজত্বের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেন আকবর।
গড় ভবানীপুরের রাজপ্রাসাদ কবেই দামোদরের জলে তলিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের সরণিতে কিংবদন্তি হয়ে রয়েছেন ভবশঙ্করী। ইতিহাসের উপাদান বলতে আছে ভগ্নপ্রায় শ্রীশ্রী জিউ মণিনাথের মন্দির আর ভুরসুট রাজত্বের নামে রেকর্ড করা জমি। এই দুই উপাদানকে আঁকড়েই উদয়নারায়ণপুরবাসী তুলে ধরতে চাইছেন রানি ভবশঙ্করীর ইতিহাস। এই এলাকাকে স্থান করে দিতে চাইছেন পর্যটন মানচিত্রে। উদ্যোগের মূল হোতা বিধায়ক সমীর পাঁজা। সঙ্গে রয়েছেন উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণ গায়েন, সহ-সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত দাস ও কর্মাধ্যক্ষ সুখেন্দু চন্দ্র। বিধায়ক বলেন, ‘‘একটা দল হিসাবে কাজ করছি আমরা।’’
ইতিমধ্যেই সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল এবং জেলা পরিষদের টাকায় এখানে হয়েছে নানা কাজ। চালু হয়েছে মেলা। বিধায়ক বলেন, ‘‘এই পর্যটনকেন্দ্রকে রাজ্য তালিকায় তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)