কৃতি: সুস্মিতা সরকার।
স্মার্টফোনের অভাবে করোন-পর্বে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ হয়নি। বছর আড়াই আগে অসুখে মারা গিয়েছেন মা। বাবা ফের সংসার পেতেছেন। অভাবের পাশাপাশি মানসিক কষ্টের সঙ্গেও কম যুদ্ধ করতে হয়নি মেয়েটাকে। মার্কশিট দেখে অবশ্য সে সব বোঝার উপায় নেই। মামার অভাবের সংসারে থেকেই ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছে বলাগড়ের সুস্মিতা সরকার।
বলাগড়ের গুপ্তিপাড়ার পাঁচমহল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সু্স্মিতার ঝুলিতে ৬৩৬ নম্বর। বাংলায় ৯৫, ইংরেজিতে ৯১, ভৌতবিজ্ঞান এবং জীবনবিজ্ঞানে ৯০, অঙ্কে ৮৭, ইতিহাসে ৮৬ এবং ভুগোলে ৯৭ পেয়েছে সে।
ভাগ্নির এত নম্বর দেখে অবশ্য বেশ চিন্তায় পড়েছেন মামা সমীর বণিক। পরবর্তী পড়াশোনা চালাবেন কী করে! তিনি বাড়ি বাড়ি কাঠের কাজ করেন। যৎসামান্য রোজগার। বাড়িতে তাঁর অসুস্থ বাবা-মা, স্ত্রী এবং ৯ বছরের ছেলে আছে।
সমীরের চিন্তা, ‘‘সংসার সামলে ভাগ্নির বড় ক্লাসে পড়ার খরচ কী করে সামলাব! কিন্তু ওকে যে মানুষ করতেই হবে। এত ভাল নম্বর পেয়েছে মেয়েটা।’’ সুস্মিতা জানায়, সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে।
আগে সুস্মিতা নদিয়ার কল্যাণীর স্কুলে পড়ত। গুপ্তিপাড়ার সুলতানপুরে মামাবাড়িতে চলে আসার পরে পাঁচমহল গার্লসে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিছু দিন পরেই লকডাউন হয়ে যায়। তখন সমীরের স্মার্টফোন ছিল না। পরে তিনি স্মার্টফোন কিনলেও সেটি তাঁর কাছেই রাখতে হত। ফলে, সুস্মিতার অনলাইন ক্লাস করার উপায় ছিল না।
নির্মল পাল নামে সমীরের এক বন্ধু সুস্মিতাকে নিখরচায় সব বিষয় পড়িয়েছেন। বইপত্র দিয়েও সাহায্য করেছেন। আরও এক গৃহশিক্ষক ছিলেন। সমীর বলেন, ‘‘এ বার কালনায় এক শিক্ষকের কাছে ভাগ্নিকে রসায়ন পড়তে পাঠাচ্ছি। শিক্ষকের বেতন, ভাগ্নির যাতায়াতের খরচ রয়েছে। এক শিক্ষক বলেছেন, যতটা পারব, সেটুকু বেতনই উনি নেবেন। সব খরচ কী করে সামাল দেব, সেটাই চিন্তার!’’ সুস্মিতার কথায়, ‘‘সংসারে মামা একাই রোজগেরে। কষ্টে সংসার চলে। তবুও আমাকে পড়াবে বলেছে।’’
সুস্মিতার স্বপ্ন, রসায়ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা করবে। সেই স্বপ্নপূরণের রসায়নই খুঁজে চলেছেন প্রতিকূলতাকে হেলায় হারানো মেধাবী মেয়ের মামা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy