তাজপুরের রায় পরিবারের রথ। —নিজস্ব চিত্র।
রথের দিনে ব্যস্ততার শেষ থাকে না সাকু কাজির। আমতার তাজপুরে রায় পরিবারের প্রাচীন এই রথযাত্রার আয়োজনে তাঁকেও হাত মেলাতে হয়! শুধু সাকু নন, হাওড়ার আমতার তাজপুরে রায় পরিবারের এই রথযাত্রায় মেতে ওঠেন এলাকার হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরমানুষ। মঙ্গলবারের রথেও দেখা গেল সে দৃশ্য।
এই এলাকার এক কালের জমিদার ছিলেন রায়েরা। বহু বছর আগে তাঁরা এলাকায় তাঁদের বাড়ির রথই বেরোত। শুরু থেকেই এই রথযাত্রার আয়োজনে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিতেন। একটা সময়ে এই রথযাত্রার যে জাঁকছিল, তা পরবর্তীকালে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে সম্প্রীতিরসুর কাটেনি।
রায়বাড়িতে রথের জন্য আলাদা ঘর আছে। সেখান থেকে রথ বের করে দিন পনেরো আগে থেকে তা সংস্কার করা হয়। রং করা হয়। রথের দিনে পুজো করে সেই রথে জগন্নাথদেবকে অধিষ্ঠিত করা হয়। সে সময়ে পুজোর কাজে সাহায্য করেন সাকুু। তা ছাড়া, রথের রশিতে প্রথম টান দেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই। মিলিত হাতের রশির টানে জগন্নাথ দেবের রথ পৌছে যায় গন্তব্যে। এখানে সাত দিন থাকার পরে একই ভাবে রথ ফিরে আসে বাড়িতে। উল্টোরথেও দেখা যায় সম্প্রীতির একই ছবি। রথ সংস্কার এবং রাস্তা আলো দিয়ে সাজানোর খরচ বহন করেন রায় পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যেরা। রথ উপলক্ষে মেলা বসে।
রায় পরিবারের সদস্য মানস রায় বলেন, ‘‘জমিদারির শুরু থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এলাকার মুসলিমদের সুসম্পর্ক ছিল, তা এখনও বজায় আছে। রথের দিনে সেই সম্প্রীতি আরও বেশি করে বোঝা যায়।’’ একই বক্তব্য পরিবারের আরও এক সদস্য স্বরূপেরও। সাকু বলেন, ‘‘রথযাত্রায় যোগ দেওয়া আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য।’’
এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দেশ জুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির যে পরিস্থিতি, সেখানে আমাদের এলাকার রথযাত্রা অন্য রকম সংস্কৃতি তুলে ধে।’’
এলাকার বাসিন্দা, আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘সম্প্রীতির এই নজির রায় পরিবারের রথকে অনন্য করে তুলেছে।’’ তাজপুর পঞ্চায়েতের প্রধান গোলাম খানও জানালেন, রথ তাঁদের এলাকার সম্প্রীতিকে ধরে রেখেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy