দুর্দশা: মুমূর্ষু রোগীকে এ ভাবেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় জলমগ্ন খানাকুলে। ফাইল ছবি
বন্যায় চিকিৎসা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নদনদী ঘেরা খানাকুল-২ ব্লকের রোগীদের। নাজেহাল হন তাঁদের পরিবারের লোকেরা। ৮-১২ ফুট জল ভেঙে রোগী খুঁজে পেতে নাকাল হন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাও। গতবারেও দেখা গিয়েছে সে দৃশ্য। এ বার সে সব প্রতিকূলতা কাটাতে আগেভাগে কোমর বাঁধল স্বাস্থ্য দফতর। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চারটি করে শয্যা বাড়ানো-সহ বেশ কিছু পরিকাঠামো গোছানো হচ্ছে।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রক্তিম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গতবারের ভয়াবহ বন্যায়, বিশেষ করে প্রসূতি, সাপে কাটা এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চটজলদি পরিষেবা দিতে খুব বেগ পেতে হয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে এ বার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।”
কেমন সেই পরিকাঠামো?
ওই স্বাস্থ্যকর্তা জানান, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীন তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দু’টি করে মোট চারটি শয্যা করা হয়েছে। প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে সমস্যার দ্রুত খবর পেতে একজন করে স্বাস্থ্যকর্মীকে নোডাল অফিসার রাখা হয়েছে। মোট ২৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশ জলমগ্ন হলে অনেক সময়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়। সঠিক অবস্থান খুঁজে পেতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে গুগল ম্যাপে যুক্ত করা হয়েছে। যাতে ম্যাপ দেখে দ্রুত পৌঁছনো যায়। সর্বোপরি, সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সাপে কাটার প্রতিষেধক- সহ সব রকম ওষুধ পাঠানো হয়ছে। খালি দু’টি নৌকার ব্যবস্থা করা এখনও বাকি। সেগুলি ব্লক এবং মহকুমা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা করার হবে বলে জানান ওই স্বাস্থ্যকর্তা।
আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাপ্রবণ খানাকুল-২ ব্লক। সমতল থেকে ভৌগোলিক ভাবে প্রায় ১০ ফুট নীচে এই এলাকা। এখানকার ১১টি পঞ্চায়েতের মোট ৫৭টি মৌজাতেই ৮-১২ ফুট জল দাঁড়িয়ে যায় ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের হিসাব। প্রাণহানি, ঘরবাড়ি, কৃষি, মাছ চাষে ক্ষয়ক্ষতির নজির থাকে প্রায় প্রতি বছর। বন্যায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও লেগে থাকে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, নদীঘেরা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার কাঠের সেতু বন্যায় ভেঙে যায়। তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে শাবলসিংহপুরেরটি জেগে থাকলেও মাড়োখানা এবং রামচন্দ্রপুর জলের তলায় থাকে। স্বাস্থ্য পরিষেবার অনিশ্চয়তায় ব্লকের রাজহাটি-১ ও ২, ধান্যগোড়ি, জগৎপুর এবং মাড়োখানা পঞ্চায়েত এলাকার মানুষদের অনেকেই দূরের খানাকুল-১ ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতাল বা মহকুমা হাসপাতালে পাড়ি দেন। দুর্ভোগ পোহাতে হয় পলাশপাই-১ ও ২, চিংড়া, নতিবপুর-১ ও ২ এবং শাবলসিংহপুর এলাকার মানুষদের।
গত বছরই বন্যার সময় ৩ অক্টোবর খবর পেয়ে রাত দেড়টা নাগাদ ব্লক স্বাস্থ্যকর্মীরা শাবলসিংহপুরের ধাড়াপাড়ার এক প্রসূতিকে মুণ্ডেশ্বরী নদীর দু’টি শাখা পার করিয়ে ব্লক হাসপাতালে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করান। আরও দুর্গম হয়ে পড়া ধান্যগোড়ি থেকে আর এক প্রসূতিকে সেনার সাহায্য নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেআনা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy