চুঁচুড়া-মগরা ব্লক অফিসে গল্পগুজব করে রাত কাটাচ্ছেন কর্মীরা।
কোথাও রান্না হল ডিম-ভাত, কোথাও মাংস-ভাত।
নবান্ন থেকে নির্দেশিকা এসেছে, ধর্মঘটের দিনে অফিসে আসতেই হবে। না হলে কাটা যাবে মাইনে। তার পরেই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের আগের রাতে রান্নার তোড়জোড় শুরু করে দেন সরকারী কর্মীরা। মশারি, ধূপ, চাদরের ব্যবস্থা করে বৃহস্পতিবার রাতটা অফিসেই কাটিয়ে দেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার অফিসে ঢোকার সময় আরামবাগের যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ মজুমদারের কাঁধের ব্যাগটি অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই ফোলা লাগছিল কর্মীদের। একই ভাবে দফতরে ঢুকলেন আরেক যুগ্ম বিডিও প্রদীপ রায় এবং ব্লক সমবায় পরিদর্শক সুজন দে। পরে জানা গেল, তাঁদের ব্যাগে রয়েছে রাত্রিবাসের পোশাক, টুথব্রাশ, মাজন এবং শুকনো খাবার। বিশ্বনাথবাবু আবার গামছা আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে গামছা কিনিয়ে আনান। ধমর্ঘটের দিনে অফিস আসার যানবাহন মিলবে কি না সেই সংশয়ে অফিসেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। রাতে সেখানে রান্না হল ভাত এবং মাংস। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে কিনে আনা হয়েছিল মশা মারার তেল।
চুঁচুড়া-মগরা ব্লক অফিসের কয়েক জন কর্মীও রাতে অফিসেই থাকেন। ওই ব্লকের পঞ্চায়েত আধিকারিক সাধনচন্দ্র দাস থাকেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। কোষাধ্যক্ষ কৃষ্ণেন্দু মৈত্র আসেন কলকাতার টালিগঞ্জ থেকে। বৃহস্পতিবার অফিস করে তাঁরা অফিসেই থেকে যান। এখানেও রাতে রান্না হয় মাংস এবং ভাত। শেষ পাতে ছিল চাটনি। বিডিও অমিতকুমার বসু বলেন, ‘‘শুক্রবার যাঁরা ট্রেনে চেপে আসবেন তাঁদের জন্য চুঁচুড়া, কল্যাণী এবং মগরা স্টেশনে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ খন্যানের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কয়েকজন অফিসার ও কর্মী বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কে থেকে যান। ব্যাঙ্কের এক অফিসার বলেন, ‘‘আমার বাড়ি চন্দননগরে। আগামীকাল যানবাহন কতটা চলবে বুঝতে পারছি না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে রাতটা সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যাঙ্কে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’
হাওড়ার বিভিন্ন সরকারি অফিসেও দেখা গিয়েছে কমবেশি একই ছবি। বাগনান ২ ব্লক অফিসের কর্মী দেবকুমার চিল আসেন উত্তরপাড়া থেকে। দীপঙ্কর কর্মকারের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর। তাঁদের মতো আরও জনা দশেক কর্মী ওই অফিসে রাত কাটিয়েছেন। এখানে রান্না হয়েছিল মেনু ভাত, ডাল, মাছ। বিডিও প্রণব কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘যে সব কর্মী অফিসে থেকে যেতে চেয়েছেন তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ একইভাবে শ্যামপুর ১ ও ২, উলুবেড়িয়া ১, উদয়নারায়ণপুর, উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসকের অফিস-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে রাতে জমিয়ে রান্নার ব্যবস্থা ছিল।
উলুবেড়িয়া ২ ব্লক অফিসে চলছে রান্না। বৃহস্পতিবার।ছবি: সুশান্ত সরকার ও সুব্রত জানা।
রাতে খাবারের জন্য কোথা থেকে আসছে টাকা? কর্মীদের দাবি, তাঁরা নিজেদের পকেট থেকেই রাতের খাবার আয়োজন করেছেন।
তবে কয়েকটি সরকারি অফিসে অবশ্য নিশিযাপনের ব্যবস্থা ছিল না। যেমন চুঁচুড়ায় জেলাশাসকের দফতর। এই অফিসের অনেক কর্মী শুক্রবার ভোরেই বাড়ি থেকে বেরোবেন বলে জানিয়েছেন। ওই অফিসের এক কর্মী বলেন, ‘‘ভাটপাড়ায় থাকি। শুক্রবার ভোরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ব। প্রয়োজনে অফিস শুরুর আগে মাঠে বসে থাকব।’’
ধর্মঘটের দিন পর্যাপ্ত সংখ্যায় সরকারি বাস চালানোর আশ্বাস দিয়েছে দুই জেলার পরিবহণ দফতর। কিন্তু বেসরকারি বাস কতখানি পথে নামবে? দুই জেলার বাস মালিকদের একাংশের দাবি, শুক্রবার বাস চলবে। আবার অনেকে জানিয়েছেন, তাঁরা বাস নামাবেন না। কারন ধর্মঘটের দিনে বাসে ভাঙচুর হলে বিমা কোম্পানির থেকে ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যা হয়। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারি বাস চলবে। পুলিশ কর্তারাই আশ্বাস, ধর্মঘট মোকাবিলায় রাস্তায় থাকবেন পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী। জোর করে ধর্মঘট করার চেষ্টা হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy