মৃত তারক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
কর্মরত অবস্থায় মেশিনে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। গুরুতর জখম তাঁর সঙ্গীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির মগরার কুন্তিঘাটে কেশোরাম রেয়ন কারখানায়। পুলিশ জানায় মৃতের নাম তারক বন্দ্যোপাধ্যায় (৪৭)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুতো তৈরির ওই কারখানার ভিসকোস বিভাগের কর্মী ছিলেন তারকবাবু। এ দিন তিনি কাপড় শুকানোর মেশিনে কাজ করছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করছিলেন মহেশ্বর রায়। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মেশিনটি বন্ধের পর তার ভিতর থেকে কাপড় বের করার সময় আচমকাই মেশিনটি চালু হয়ে যায়। মেশিনের টানে তারকবাবুর শরীর ভিতরে ঢুকে যায়। তাঁর আর্ত চিৎকারে সহকর্মী মহেশ্বর ছুটে আসেন। তারকবাবুকে বাঁচানোর চেষ্টায় মেশিনটি হাত দিয়ে আটকাতে যান তিনি। কিন্তু জোরে ঘুরতে থাকা মেশিনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যান। তাঁর মাথায় গভীর আঘাত লাগে। মেশিনে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারকবাবু। মহেশ্বরবাবুর চিৎকার শুনে কারখানার অন্য শ্রমিকেরা ছুটে আসেন। মেশিন ভেঙে তারকবাবুর দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর পুলিশ গেলে তাদের মৃতদেহ উদ্ধারে বাধা দেন শ্রমিকেরা। তাঁরা দাবি জানান, মৃতের পরিবারকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, কর্মরত অবস্থায় একজন শ্রমিকের মৃত্যুর পর কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আধিকারিক ঘটনাস্থলে আসেননি।
ঘটনার খবর পেয়েই চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাস কারখানায় যান। মৃত শ্রমিকের পরিবার যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সে জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। কারখানার ম্যানেজার প্রদীপ দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুর কারণে কারখানার তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় তা ঠিক করা হবে।’’ এর পর সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
কারখানা সূত্রে খবর, তারকবাবু প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, যে সব কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। অন্যদের উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, পাঁচ বছর আগে কর্মরত অবস্থায় এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সামান্য টাকা দেওয়া হয়। তা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কারখানা চালু হয়।
এ দিন দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুতে তারকবাবুর স্ত্রী প্রতিমা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংসারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। এখন কী হবে জানি না। কারখানা কর্তৃপক্ষ কী ক্ষতিপূরণ দেন দেখা যাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy